সিলেটে বিভিন্ন প্রকেল্পর উদ্বোধনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন: ১২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ১৩ বছর কেন?
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০২৩, ৯:৩৪:৪৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে ১৮৯ কোটি টাকার শতাধিক প্রকল্পের মধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজে ধীরগতিতে আবারো অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে কাজ শেষ করুন। ১২ কিলোমিটার বাদাঘাট-বাইপাস সড়ক নির্মাণে ১৩ বছর কেন লাগবে‒ এমন প্রশ্নও তোলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার সকালে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো আগামী নির্বাচনের আগেই শেষ করতে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম কেবল অভাবের কারণেই বাড়ে না। বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণেও বাড়ে। তাই কোন জমি যাতে পতিত না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে মন্ত্রী বলেন, একটা মরিচের গাছ লাগালে পরিবারের মরিচের চাহিদা মেটানো যায়। এসব ব্যাপারে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
সিলেটের উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও জাতীয় ইস্যু নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। ধনী দেশগুলো অন্য দেশের উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশও বিদেশিদের কাছে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। এ কারণে বৈশ্বিক হেলাখেলার মধ্যে পড়ে গেছি আমরা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব সুন্দর একটা নির্বাচন হবে। সরকারে আওয়ামী লীগ আছে বলেই দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। দেশে গত সাড়ে ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তার গতি ঠিক রাখতে বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার।
তিনি বলেন, একটি দল ও তাদের প্রবাসী সহযোগীরা বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশিদের কাছে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিদেশে অর্থপাচার আওয়ামী লীগ চায় না উল্লেখ করে তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী আরও বলেন, অনেকে বছরের পর বছর বিদেশে আয়েশ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কংগ্রেসম্যানের আজ চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) কংগ্রেসম্যান নিয়ে এত চিন্তায় কেন? আমেরিকাতে ৪৩৫ জন কংগ্রেসম্যান আছেন। তারা দুনিয়া বেড়াবেন তো বটেই। ওরা এলে ভালো। আমাদের দেশ দেখে যাক। তাঁদের ধারণা, বাংলাদেশ হচ্ছে দরিদ্র সাইক্লোনের দেশ। আসলে দেখবেন, এরা তো গরিব না, ভালো। আমরা ওয়েলকাম করি। তাঁরা আসছেন, এটা সুখবর। তাঁরা দেখুক। তাঁদের ধারণা যে বাংলাদেশে দিনে- রাতে রাস্তাঘাটে মানুষ মরছে।
১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব এনামুল হাবিব, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর নির্বাহী প্রকৌশলী এনামূল কবির।
অনুষ্ঠানে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মিল্লাত আহমদ চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সম্রাট হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নিজাম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিরন মিয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিরন মাহমুদ, উপজেলা প্রকৌশলী মো: হাসানুজ্জামানসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিকেলে সিলেট জেলা পরিষদ শিক্ষা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট মোঃ নাসির উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সিংহ এর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর রমা বিজয় সরকার, জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন। সিলেট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশ ও সিএ একেএম কামারুজ্জামান মাসুমের পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আমাতুজ জাহুরা রওশন জেবীন, জেলা পরিষদ সদস্য আপ্তাব আলী কালা মিয়া, সুষমা সুলতানা রুহি, মোছাদ্দিক আহমদ, মোঃ নাসির উদ্দিন, মোঃ আঃ হামিদ, এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ, ফয়জুল ইসলাম (ফয়ছল), সুবাস দাশ, ইফজাল আহমদ চৌধুরী প্রমূখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেলা পরিষদ সদস্য মোছাদ্দিক আহমদ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুমাইয়া জান্নাত ও আবু তাহের। উক্ত বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ৩৯৩ জন শিক্ষার্থীকে মোট ১৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫ শত টাকা প্রদান করা হয়।