যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক পদক্ষেপ বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:৩৬ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘আবাসন খাতে, অর্থ পাচারে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিচয় গোপন রেখে বাড়ি কেনার সুযোগ বন্ধ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় শিগগিরই এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রস্তাব করবে। যার ফলে বেনামি বিলাসবহুল বাড়ি কেনাকাটার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।
জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ও অন্যান্য অপরাধীর অর্জিত গোপন অর্থ আবাসন খাতে ব্যয় করার সুযোগ রহিত করে দিতে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই আইনে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে, এটি পাস হলে পেশাদার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা নগদ অর্থে আবাসন ক্রেতাদের নাম পরিচয় ট্রেজারির আর্থিক অপরাধ নেটওয়ার্কের (ফিনসেন) কাছে জমা দেবে। ফিনসেন তার নিয়ন্ত্রক এজেন্ডা অনুসারে চলতি মাসের যে কোন দিন নতুন নিয়মটি প্রস্তাব করতে পারে। তবে অন্য কোন কারণে প্রস্তাবের সময়সীমা পরিবর্তনও হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য হচ্ছে, দুর্নীতিবিরোধী আইনজীবী ও আইন প্রণেতারা নতুন এ আইন পাশ করতে চাপ সৃষ্টি করে আসছেন, যা বর্তমান প্যাচওয়ার্ক রিপোর্টিং সিস্টেমকে প্রতিস্থাপন করবে। কয়েক দশক যাবৎ অপরাধীরা বেনামে অর্জিত সম্পদ রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের নামে লুকিয়ে রেখে আসছে। ২০১৫-২০ সালের মধ্যে মার্কিন রিয়েল এস্টেটে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাচার করা হয়েছে। এ খাত ব্যবহার করে অর্থ পাচারের মুলোৎপাটনের লক্ষ্যে ফিনসেন আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ির মালিকদের নাম নথি থেকে লিপিবদ্ধ করে রাখার এ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ফিনসেন এই আইনটির সাথে এমন একটি ধারা প্রস্তাব করতে চায়, যা দিয়ে শেল-এর মতো বড় বড় কোম্পানীর মুখোশও উন্মোচন করা যাবে। লক্ষণীয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকগুলো ক্রেতার অর্থের উৎস ও সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করা প্রয়োজন হলেও আবাসন খাতের বেলায় বিদ্যমান আইনে এক্ষেত্রে তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিধি নেই।
বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্রের উপরোক্ত পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবাজদের জন্য যে একটি বড় দুঃসংবাদ এতে কোন সন্দেহ নেই। যদিও যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানী কোম্পানী শেল-এর মতো বড় বড় কোম্পানীর দুর্নীতি বন্ধের জন্য এই নীতিমালা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সত্বেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও এটা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যাবে। তাদের দুর্নীতির পথ বন্ধ করার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা যে সহায়ক হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
দেখা গেছে, বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে এদেশের দুর্নীতিবাজ চক্র। তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দুবাই, কাতার ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তাদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি বড় অংশ পাচার করেছে। এর অনেক অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে আবাসন খাতে। এভাবে বাংলাদেশের বহু অসৎ রাজনীতিবিদ, ঘুষখোর আমলা ও অসাধু ব্যবসায়ী এসব দেশে ফ্লাট বাড়িসহ অন্যান্য সম্পত্তির মালিক। ইতোপূর্বে কানাডা কর্তৃক অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থের দ্বারা সম্পত্তি ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর প্রকাশিত হয়। এখন যুক্তরাষ্ট্রও একই পথে হাঁটছে। আর এটা করা হলে বাংলাদেশের বহু দুর্নীতিবাজ অর্থ পাচারকারীর অর্থ পাচারের পথ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ইতোমধ্যে পাচারকৃত ও আবাসন খাতে বিনিয়োগকৃত অর্থ বেহাত হওয়ার আশংকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এসব সম্পদ জব্দ করতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে এবং দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী ও আর্থিকভাবে শোষিত-নিষ্পেষিত মানুষের জন্য ইতিবাচক হয়ে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও স্যাংশন বিষয়ক কর্মকর্তা রিচার্ড নেফিউয়ের বাংলাদেশ সফর উপরোক্ত দুর্নীতিবাজদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করেছে। এই আতংক থেকে এেেদশের অসৎ দুর্নীতিবাজরা তাদের অন্যায় অপকর্ম ও দুর্নীতির পথ পরিহার করলে, এটাই হবে এদেশে যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের সাফল্য।