‘উপহার নিতে পারবেন না চিকিৎসকরা’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:০৪ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘ওষুধ কোম্পানীর উপহার নিতে পারবেন না চিকিৎসকরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন ওষুধ কোম্পানি বা তাদের মেডিকেল রিপ্রেজেনটেন্টিভদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে ওষুধ কোম্পানি থেকে গিফট হিসেবে দেওয়া বিদেশ ভ্রমণ, হোটেল সেবা কিংবা নগদ অর্থ নিতে পারবেন না চিকিৎসকরা। শুধু তা-ই নয়, ওষুধ কোম্পানীগুলোর কোনও সেমিনার, ওয়ার্কশপ বা কনফারেন্সও অংশ নিতে পারবেন না। গত ২ আগস্ট ‘রেজিস্ট্রার মেডিকেল অনুশীলনকারীদের পেশাগত আচরণ সংক্রান্ত নিয়মবিধি’ প্রকাশ করে ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন। ওই নির্দেশিকায় ওষুধ কোম্পানীর উপহার নেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকদের স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চিকিৎসকরা কোনও ধরনের ওষুধ, ড্রাগ বা চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রের বিজ্ঞাপন বা প্রচার করতে পারবেন না। চেম্বারেও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো চিকিৎসকদের এড়িয়ে চলতে হবে।
ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনের উপরোক্ত নির্দেশনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মানবিক। বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা সেবায় বিদ্যমান অনিয়মগুলোর একটি হচ্ছে, অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয় কিংবা নি¤œমানের ওষুধ প্রেসক্রাইব বা পরামর্শ প্রদান। এর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টের পরামর্শ প্রদান। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এটা এতোই বিস্তৃত যে, দেশটির জাতীয় মেডিকেল কমিশন এ ব্যাপারে বিধি নিষেধ আরোপ ও নীতিমালা প্রণয়নে বাধ্য হয়েছে। উপরোক্ত নির্দেশনা এর প্রমাণ। বাংলাদেশে এই অপকর্ম বা অনিয়মের চর্চা বা অনুশীলন নিয়ে এ পর্যন্ত বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। এ ব্যাপারে কঠোর কোন বিধিনিষেধও জারি করা হয়নি। কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হলেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানীগুলো, এগুলো মানছেন না। ফলে এদেশের চিকিৎসা সেবা ক্রমশ: ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে সাধারণ সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠীর।
চিকিৎসকদের প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় অনেকগুলো ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া অনেক অখ্যাত ও ভুইফোঁড় কোম্পানীর অকার্যকর ওষুধ দিতে দেখা যাচ্ছে কিছু চিকিৎসককে। ফলে রোগীদের যেমন অর্থের বিনাশ হচ্ছে তেমনি রোগ নিরাময়েও কাজ করছে না এসব ওষুধ। অনেক ক্ষেত্রে ওভারডোজ হয়ে রোগীদের রোগ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেজিস্ট্যান্ট হয়ে ওঠছে নানা রোগ, উপসর্গ।
দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানী অনেক চিকিৎসককে নিয়মিত বখরা, উপঢৌকন ও নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোম্পানীগুলো তাদের প্রতিনিধিদের ব্যবহার করে। এর বিনিময়ে ঐসব লোভী প্রকৃতির চিকিৎসকদের বাধ্য করে তাদের অকার্যকর ও নিম্নমানের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে। অনেক ক্ষেত্রে বিনা প্রয়োজনে তাদের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে। এভাবে অনেক চিকিৎসক এমনকি অনেক নামীদামী চিকিৎসকও নগদ অর্থ, বিদেশ ভ্রমণের টিকেট, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি উপহার গ্রহণ করে এ ধরনের অনৈতিক ও অমানবিক কাজ করছেন। এতে রোগীরা বিশেষভাবে দরিদ্র শ্রেণীর রোগীদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশেও ভারতের মতো এ ধরনের নীতিমালা প্রণয়নের দাবি সচেতন মহলের। এ সংক্রান্ত যেসব বিধান রয়েছে সেগুলো যাতে যথাযথভাবে কার্যকর বা বাস্তবায়ন হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া এখন সময়ের দাবি। কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের চিকিৎসা খাত যেভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাঝে নিমজ্জিত এবং ওষুধ কোম্পানীগুলোর যে দৌরাত্ম্য বিদ্যমান, এমন অবস্থায় এই জনগুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে ভাবার সময় ও মানসিকতা আছে কি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের, এমন প্রশ্ন যে কারোর মনেই জাগতে পারে।