বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর খরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:৫৩ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘কেন বিদেশী শিক্ষার্থী পাচ্ছে না শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২১-২২ পর্যন্ত এই চার শিক্ষাবর্ষে কোন বিদেশী শিক্ষার্থীই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি। এমনকি চলতি ভর্তি মৌসুমেও কোন বিদেশী শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি।
শাবি অর্থাৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩-০৪ থেকে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি নেন ১৫ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১০ জন ছিলেন নেপালের, ৪ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতের এবং ১ জন ফিনল্যান্ডের।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিকট থেকে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে তেমন কোন ভালো অবস্থানে না থাকার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে না। অনেকের মতে, আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানই যখন ৫০০ এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ১০০০তম অবস্থানেরও বাইরে, তখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিভাগীয় নগরীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সহজেই অনুমেয়। আর বিদেশী শিক্ষার্থীরা একটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি খুঁজে, তা হচ্ছে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র্যাংকিং। দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে শাবি স্থান পেলেও এর অবস্থান ছিলো অনেক নি¤œ পর্যায়ে। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটও নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না। শাবি’র জনৈক শিক্ষক বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেকেই ফান্ডিং বা স্কলারশীপ খোঁজেন। সেটি না পাওয়ায়ও শাবিতে বিদেশী শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ।
অনেকের অভিযোগ, লেখাপড়ার পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এর আশপাশে খ-কালীন চাকুরীরও কোন সুযোগ নেই। ভিসায় চাকুরীর অনুমোদন দেওয়া থাকে না। ফলে যারা লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করতে চান বা উপার্জন করতে চান, তারা চাইলেও আসতে পারেন না। এছাড়া রয়েছে ভাষাগত সমস্যা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশীর ভাগ শিক্ষক বাংলায় পড়ান, ক্লাশ নেন। এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যার। শিক্ষকরাও নিজেদের গবেষণার কাজে শিক্ষার্থীদের তেমন সংযুক্ত করেন না। বর্তমানে বিদেশীদের থাকার জন্যও কোন সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
লক্ষণীয় যে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোই বরং অনেক প্রতিবেশী উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন ব্যাপক হারে বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট ও ভর্তি করতে সক্ষম হচ্ছে, তখন শাবিসহ এদেশের নামীদামী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে নিদারুন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এসব দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে। এতে সমৃদ্ধ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতি। শুধু তাই নয়, এতে ঐসব দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জল হচ্ছে বিদেশে। এছাড়া গ্লোবাল র্যাংকিংয়ে ভালো করতে হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক র্যাংকিং করার সময় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আছে কি-না এবং থাকলে এদের সংখ্যা কত, তা দেখা হয়।
তাছাড়া বিদেশী শিক্ষার্থী থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির বিকাশ ঘটে, আন্তর্জাতিক পরিসরে তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। বলা বাহুল্য, বাজেটে বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে যে ব্যয় বরাদ্দ থাকে, এতে এদেশের শিক্ষার্থীদেরই ভালো পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনা এবং শিক্ষকদের গবেষণা কর্ম চালিয়ে যাওয়া কঠিন। এমন অবস্থায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট ফান্ডিং বা স্কলারশীপ প্রদানের কথা ভাবাও যায় না। আর রাস্তাঘাট সেতু টানেল ইত্যাদি মেগা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও এদেশের শিক্ষা খাতের দিকে দৃষ্টি দেয়ার আগ্রহ ও সময় নেই সরকারের। ফলে এদেশের স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা এখন অঢনেকটা অভিভাবকহীন সন্তানদের মতো। এছাড়া ক্ষমতাসীনরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের ফলে এগুলোতে একাডেমিক ও রিসার্চের পরিবেশ মারাত্মকভাবে কলুষিত ও ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে দেশে বিদেশে এদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে হতে এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এ অবস্থায় বিদেশী শিক্ষার্থীরা এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসবে কোন দুঃখে, এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।