প্রিপেইড গ্যাস মিটারের আওতায় সিলেটের ১৭ হাজার গ্রাহক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ৬:০০:৫৩ অপরাহ্ন
ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ হাজারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়
স্টাফ রিপোর্টার : চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেট নগরীর ৫০ হাজার গ্যাস গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ জোরদার করেছে জালালাবাদ গ্যাস। গত এপ্রিল থেকে শুরু হয় মিটার বসানোর কাজ। ৪ মাসে সিলেটে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এসেছেন ১৭ হাজারের বেশী গ্যাস গ্রাহক। আগামী ৪ মাসের মধ্যে বাকী ৩৫ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই কাজের গতি বাড়িয়েছে কাজ জোরদার করেছে জালালাবাদ গ্যাস। এ ব্যাপারে গ্রাহকের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
জানা গেছে, গ্যাসের অপচয় রোধ, সাশ্রয় ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিলেটে প্রিপেইড মিটার স্থাপন জোরেশোরে চলছে। প্রথম ধাপে এই প্রকল্পের আওতায় আসছেন নগরী ও সদর উপজেলার ৫০ হাজার গ্রাহক। এরই মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার বাসাবাড়িতে মিটার বসানোর কাজ শেষ করেছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। এতে মাসে প্রায় ৪০০ টাকা কম খরচ হচ্ছে বলে গ্রাহকরা জানিয়েছেন।
জালালাবাদ গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, বতর্মানে তাদের ২ লাখ ২১ হাজার ৪৫৯ গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে আবাসিক বা গৃহস্থালি ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৪ জন। বাকি ১ হাজার ৬৮৪টি সংযোগ বিভিন্ন শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র, হোটেল-রেস্তোরাঁ, চা বাগান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের। আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলার প্রায় ৯৫ হাজার। তাদের মধ্যে ১ম ধাপে ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে জালালাবাদ গ্যাস। প্রকল্পে ১২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। চুক্তির পর মিটার স্থাপনে মালপত্র সিলেট আনা হয়। গত মাসের শেষের দিকে প্রচার চালানোর পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে জালালাবাদ গ্যাস। কিন্তু এর আগ থেকে অর্থাৎ এপ্রিলের শেষের দিকেই সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকা ও সদর উপজেলায় প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। মিটারগুলো বিনামূল্যে দিলেও একাধিক ডাবল চুলা থাকা সাপেক্ষে বাসা পর্যন্ত ডিআই পাইপ ও সংযোগ স্থাপনের খরচ গ্রাহককে বহন করতে হচ্ছে। তবে গ্যাস রাইজার থেকে সরাসরি একটি লাইন পর্যন্ত খরচ বহন করছে জালালাবাদ গ্যাস।
নগরীর হাউজিং এলাকার এক আবাসিক গ্রাহক জানান, আগে একটি দ্বৈত চুলার জন্য মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা বিল দেওয়া লাগত। প্রিপেইড মিটারের ফলে ৭০০ টাকায় মাস পার হচ্ছে। খরচ সাশ্রয়ের সঙ্গে কমেছে ভোগান্তি। বিল দেওয়া নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। এমনকি আগে লাইনে গ্যাস থাকুক, না থাকুক মাস শেষে ধার্য বিল পরিশোধ করা লাগত। তবে এখন যা খরচ করব, কেবল তারই বিল দিচ্ছি। এতে নিজেরই লাভ হচ্ছে বেশী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিটারের মূল্য মাসিক ভাড়া হিসাবে সমন্বয় করা হবে। নিকটস্থ রিচার্জ পয়েন্ট থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট কিনে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা যাবে। রিচার্জ শেষ হলেও এতে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের সুবিধা থাকবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রিপেইড গ্যাস মিটার থাকলেও সিলেটে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে এ পদ্ধতি। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ৩ লাখ গ্যাসের চুলা প্রিপেইট মিটারের আওতায় এসেছে। রাজধানীতে প্রকল্পটি জনপ্রিয় হয়েছে। ঢাকায় অনেক গ্রাহক নিজ থেকে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সিলেটেও ব্যাপক সাড়া মিলছে। যারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রিপেইড মিটার সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
জালালাবাদ গ্যাস (জেজিটিডিএসএল) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি আবাসিক গ্রাহকের মাসিক গড় গ্যাস ব্যবহার ৬৬ ঘনমিটার থেকে ৪০ ঘনমিটারে নেমে আসবে। ফলে গ্রাহকপ্রতি গ্যাস সাশ্রয় হবে গড়ে ২৬ ঘনমিটার। গ্যাস বিতরণ লাইন লিকেজজনিত অপচয়ও রোধ হবে। এবছরের শুরুতে ১ম ধাপে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, হাউজিং এস্টেট, মিয়া ফাজিল চিশত, আম্বরখানা, মিরাবাজার, মেহেন্দীবাগ, লামাবাজার, মেজরটিলা সহ তৎপাশর্^বর্তী কয়েকটি এলাকায় সার্ভে করা হয়। প্রথমেই শাহজালাল উপশহর ও হাউজিং এস্টেট এলাকায় পাইলটিং ভিত্তিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কারণ সরকারি মালিকানাধীন এই আবাসিক এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। তাই এখানে কাজ করা সহজ হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বিদ্যুতের সাথে পাল্লা দিয়ে দফায় দফায় বাড়ছে গ্যাসের দাম। যা গ্রাহকদের ঘাড়েই পড়ে। কিন্তু লস ঠেকানোর উদ্যোগগুলো খুবই ধীরগতিতে চলে। রান্নার গ্যাস ব্যবহারে চুলাপ্রতি টাকা দেয়ার বদলে প্রিপেইড মিটারে খরচ ও গ্যাসের ব্যবহার দুটোই অনেক কম হয়। কিন্তু সিলেটে মিটার বসানোর এই প্রকল্পে শুরু থেকে দেখা দেয় ধীরগতি। তবে শেষমেষ গত এপ্রিলের শেষের দিকে আলোর মুখ দেখে মিটার স্থাপন প্রকল্প। ইতোমধ্যে ১৭ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে এসেছেন। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে।
জানা গেছে, সিলেটে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে এক বছর আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর গেল বছরের অক্টোবর মাসে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল)। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রথম ডিপিপি অনুযায়ী গেল বছরের নভেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর চলতি বছরের মার্চের মধ্যে কাজ শুরুর কথা। তবে ডিপিপি সংশোধন করে গেল বছরের মার্চে দরপত্র আহ্বান করে জালালাবাদ গ্যাস। এতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
দেরিতে চুক্তি সম্পর্কে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালে এ ব্যাপারে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এরপর দরপত্র আহ্বান করা হলেও উপযুক্ত দরদাতা পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয়েও কিছু অসামঞ্জস্য ছিল। তাই ডিপিপি সংশোধন করে গেল বছরে আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়।
এ ব্যাপারে প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী লিটন নন্দী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, মিটার স্থাপনের কাজ ধাপে ধাপে চলবে। গ্রাহকরাও সাড়া দিচ্ছেন। এরই মধ্যে ১৭ হাজার গ্রাহকের মিটার বসানো হয়েছে। কোনো গ্রাহক নিজ ইচ্ছায় মিটার স্থাপন করতে চাইলে ৪ টি আবাসিক কার্যালয়েও যোগাযোগ করতে পারেন। এতে তাদেরকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে মিটারিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। মিটারিংয়ের ফলে প্রধানত গ্যাসের অপচয় কমেছে। সরকার নিয়মিত রাজস্ব পাবে, বিল বাকি রাখার কোনো সুযোগও থাকছে না। এতে সরকার গ্রাহক উভয়ের লাভ।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ হাজার গ্রাহককে মিটারিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছেনা। এখন যে হারে সারা পাওয়া যাচ্ছে প্রথম দিকে কিন্তু সেই হারে সাড়া মিলেনি। তাই কাজের অগ্রগতি কম। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য সাংবাদিকসহ সিলেটের সকল গ্রাহকদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেমস লিমিটেডের (জেজিটিডিএসএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর আহমদ চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, প্রিপেইড মিটারের কাজ এপ্রিলের শেষ দিকে শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার গ্রাহক মিটারের আওতায় চলে এসেছেন। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই ১ম ধাপের ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এজন্য গ্রাহকদের আগ্রহ ও আন্তরিকতা থাকতে হবে। ১ম ধাপে ৫০ হাজার মিটার স্থাপন শেষ হলে পরবর্তীতে আরেক ধাপে আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাকীদেরও প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে।