চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:২৯ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘চাঁদের মাটি স্পর্শ করলো ভারতের চন্দ্রযান-৩’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চাঁদে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করানো দেশের তালিকায় চতুর্থ হিসেবে নাম লেখালো ভারত। এর মধ্যে দিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরু আবিষ্কারের কৃতিত্বও গড়লো ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’। এর আগে এই ইতিহাস গড়েছে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। ভারত চাঁদে নভোযান পাঠানো চতুর্থ দেশ। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে ভারতের চন্দ্রযান-২ চাঁদে অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলো।
লক্ষণীয় যে, মানুষের প্রথম চাঁদে পদার্পণ হয়েছিলো ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। তখন অর্ধশতাধিক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো মহাকাশে আরো বহু বিস্ময়কর অভিযান পরিচালনা করেছে। মানুষের অভিযান মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এসব অভিযানে মানবজাতির যে পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ ব্যয় হয়েছে, এর তুলনায় লাভ কতোটুকু হয়েছে এ নিয়ে যে কারোর মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত যতো বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে মহাকাশ অভিযান ও গবেষণায়, এই অর্থ যদি বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে ব্যয় করতো তবে বিশ্বে কোন দরিদ্র মানুষ খুঁজে পাওয়া যেতো না।
তবে একথা সত্য যে, মহাকাশে বিভিন্ন উপগ্রহ স্থাপন করায় বিশ্বে স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও তথ্য সংগ্রহে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত ও আগাম সংবাদ সংগ্রহে বিস্ময়কর সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। তা সত্বেও স্যাটেলাইট যোগাযোগ বিভিন্ন দেশের ওপর নজরদারির কাজেই বেশী ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করেই ওসমানা বিন লাদেনকে হত্যা করেছিলো। বিগত কয়েক দশক ব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যেকার স্নায়ুযুদ্ধকালে উভয় দেশই মহাকাশ যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মহাকাশে ব্যাপক অভিযান ও গবেষণা পরিচালনা করে। এজন্য শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তারা। বর্তমানে কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ুযুদ্ধ তেমনটি না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈরিতা বিদ্যমান। তাই উভয় দেশই ভূমি ও পানি ছাড়াও মহাকাশে তাদের আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এদের সাথে যুক্ত হয়েছে চীন। হয়তো ভারতও চেষ্টা করছে মহাকাশে তাদের আধিপত্য বিস্তৃত করতে। সর্বোপরি মহাকাশ গবেষণা ও অভিযান যতোটা না মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে, তার চেয়েও বেশী সামরিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পরিচালিত। এদিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চন্দ্রাভিযানের অর্ধ শতাধিক বছরের বেশীকাল পরে হলেও ভারতের বর্তমান চন্দ্রাভিযান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, স্টার ওয়ার্স বা মহাকাশ যুদ্ধে নিজেদের ক্ষমতা প্রকাশের প্রাথমিক পদক্ষেপ এই চন্দ্রাভিযান। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, মহাকাশ অভিযান ও মহাকাশ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য ভারতের আদৌ আছে কি-না, এ নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন। যে দেশে সমগ্র আফ্রিকার মহাদেশের দরিদ্র মানুষের চেয়েও বেশী দরিদ্র মানুষের বাস, সেই ভারতের পক্ষে চন্দ্রাভিযানের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা কি যৌক্তিক কিংবা মানবিক এমন প্রশ্ন খোদ ভারতের দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ সকল সচেতন ও বিবেকবান মানুষের মনে জাগতে পারে। যে অর্থ ভারত ব্যয় করেছে চাঁদে যাওয়ার জন্য, সেই অর্থ দিয়ে তার দেশের উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনকারী কোটি কোটি অর্থাৎ প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষের মধ্যে অনেকের জন্যই স্বাস্থ্যসম্মত লেট্রিনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো। কিন্তু তারা এটা করেনি। এর পেছনে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা ও ক্ষমতার অহমিকা বিদ্যমান।
বিশ্বব্যাপী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী নিজেদের শক্তিমত্তা ও ক্ষমতা প্রদর্শন এবং নির্বাচনে জয়লাভ তথা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ ধরনের মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। ভারতের মোদী সরকারও সেই পথেই হাঁটছে। ক্ষমতার আসন পাকাপোক্ত করতে দেশের অলীক ও অন্তঃসারশূন্য উন্নতি ও সমৃদ্ধি জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে তারা। এর উদাহরণ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে অর্থহীন চন্দ্রাভিযান। কবি সুকান্তের ভাষায়, ভারতের কোটি কোটি অভুক্ত মানুষের কাছে পূর্ণিমার চাঁদ অজো ঝলসানো রুটির মতোই। আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সকল ক্ষমতাধর দেশকে মহাকাশের মহাশূণ্যে এভাবে টাকা না ওড়িয়ে বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য দুরীকরনে মনোযোগী হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।