বাংলাদেশকে ৫০ মিলিয়ন ডলার শোধ : কীভাবে দেড় বছরে ঘুরে দাঁড়ালো শ্রীলংকা?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১০:০০:৩৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতির আওতায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বাংলাদেশের কাছ থেকে এক বছর মেয়াদের জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিলো শ্রীলংকা। চার কিস্তিতে নেয়া সে ঋণের ৫০ মিলিয়ন ডলার চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশকে ফেরত দিয়েছে দেশটি। এবং এ মাসের শেষ নাগাদ আরও ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে।
অথচ মাত্র দেড় বছর আগেই ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রায় দেউলিয়া হবার জেরে দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছিলো, যার পরিণতিতে শ্রীলংকার সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো। দেশ ছাড়তে হয়েছিলো দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোটাভায়া রাজাপাকশাকেও।
বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত হয়ে সেসময় এমন অবস্থা হয়েছিলো যে দেশটি আর আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছিলো না। এর জের ধরে খাদ্য, ঔষধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছিলো। তেলের স্টেশনে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিলো মানুষকে।
সে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে দেশটি এবং জমে উঠতে শুরু করেছে শ্রীলংকার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি পর্যটন খাত এবং জ্যামিতিক হারে বাড়ছে দেশটির রেমিট্যান্স। এবং এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে শিগগিরই দেশটির অর্থনীতি আরও শক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।
কলম্বোর সাংবাদিক শিহার আনিজ বলছেন, দোকানে পণ্য নেই কিংবা কিছু থাকলেও অনেক দাম, অথচ মানুষের দীর্ঘ লাইন- বিপর্যয়কর সেই অবস্থা এখন আর নেই শ্রীলংকায়। বরং দাম বেশি থাকলেও নিত্য দরকারি সব কিছুর সরবরাহ এখন বাজারে স্বাভাবিক হয়েছে। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, “পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এ অর্থে যে কোথাও এখন আর লম্বা লাইন দেখা যায় না। দাম বেশি হলেও বাজারে প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে। জীবনযাত্রাও সে সময়ের তুলনায় অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।” যদিও তিনি মনে করেন সংকট থেকে এখনো পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেনি দেশটি। বরং প্রকৃত অবস্থা কী হয় সেটা বোঝা যাবে, যখন দেশটি বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা শুরু করবে। কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রিয়াংঙ্গা দুনুসিংহে বলছেন সরকারি নীতি আর কিছু ‘অটোমেটিক’ বিষয়ের সমন্বয়েই পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে শ্রীলংকা।
কী নীতির কারণে ঘুরে দাড়াচ্ছে শ্রীলংকা :
মাত্র দেড় বছরের মধ্যে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশটি যে ঘুরে দাঁড়াতে পারলো তার কারণ হিসেবে দুটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রিয়াংঙ্গা দুনুসিংহে।বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতি পরিস্থিতির উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে রেমিট্যান্স ও পর্যটনের মতো কিছু ক্ষেত্রে অটোমেটিক রিকাভারি হয়েছে। এ দুটোর সমন্বয়েই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আরও অনেক দূর যেতে হবে।” সরকার ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়িয়েছে, এবং সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে করজাল বিস্তৃত করেছে – এর ফলও অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন অধ্যাপক দুনুসিংহে। আগের বছরের তুলনায় এ বছর পর্যটন খাত থেকে শ্রীলংকার আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। আর রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ।