নদ-নদীর সংখ্যায়ও শীর্ষে হাওর-বাওরের সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ৯:৫০:০৭ অপরাহ্ন
দেশে ৯০৭টির মাঝে সিলেটেই ১৫৭টি
জালালাবাদ রিপোর্ট : সিলেটকে বলা হয় হাওর-বাওরের জনপদ। বিশাল বিশাল হাওরের উত্তাল তালে মুখরিত সিলেট অঞ্চল। বর্ষায় নীল আকাশের সাথে জলরাশির অপার মিতালি আকৃষ্ট করে সবাইকে। এবার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বলছে, হাওর-বাওরের সিলেট নদ-নদীর সংখ্যায়ও শীর্ষ স্থানে রযেছে। দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ৯০৭টি। এরমাঝে সিলেটেই রয়েছে ১৫৭টি।
দেশের সব নদ-নদীর একটি তালিকা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। অবশ্য তারা বলছে, এটি খসড়া তালিকা। দীর্ঘ সময় ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকা নিয়ে যদি কারও কোনো মতামত বা আপত্তি থাকে, তাহলে লিখিতভাবে কমিশনকে জানাতে কমিশন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিল। শুক্রবার ছিল সর্বসাধারণের মতামত জানানোর শেষ দিন।
শুক্রবার পর্যন্ত সাতজন নদী কমিশনের কাছে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। কমিশন প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে। সবার মতামত পেলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে বাংলাদেশের নদ-নদীর তালিকা চূড়ান্ত করবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
কমিশন বলছে, তালিকায় থাকা সব নদী জীবন্ত, অর্থাৎ এসব নদী মরে যায়নি। বর্ষায় এসব নদীতে পানি থাকে। কিছু নদী শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। তবে একেবারে অস্তিত্ব নেই বা হারিয়ে গেছে-এমন কোনো নদী তাদের তালিকায় নেই।
বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা কত, তার সঠিক পরিসংখ্যান এতদিন ছিলোনা। বিভিন্ন সূত্রে নদীর যে সংখ্যা জানা যায়, সেই সংখ্যায় বিস্ময়কর পার্থক্য রয়েছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের খসড়ায় দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি নদ-নদী সিলেট বিভাগে। এই বিভাগের চারটি জেলায় নদীর সংখ্যা ১৫৭। অন্যদিকে সবচেয়ে কম নদী চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে নদীর সংখ্যা ৬০।
নদ-নদীর সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগ। এই দুই বিভাগে নদীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৩৫ ও ১২৪। এরপর নদীর সংখ্যা বেশি রংপুর বিভাগে, ১২১টি। তারপর ঢাকা বিভাগে ১১৮টি। আর রাজশাহী বিভাগে নদীর সংখ্যা ৭১।
একই নদী যেমন একাধিক জেলায় প্রবাহিত হয়েছে, তেমনি কিছু নদী আছে একাধিক বিভাগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। যেমন ব্রহ্মপুত্র রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। করতোয়া রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মধ্য নিয়ে প্রবাহিত। এ রকম নদী আছে ২২টি।
দেশে নদ-নদীর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির অন্যতম কারণ, নদ-নদীর সংখ্যা নিরূপণের সঠিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১১ সালে তাদের এক প্রকাশনায় উল্লেখ করেছে, নদ-নদীর সংখ্যা ৪০৫। তবে এই সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের অধীন প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের সহায়তায় দেশে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য কাজ শুরু করতে যাচ্ছে।
অবশ্য নদী গবেষকদের কেউ কেউ দাবি করেন, দেশে নদীর সংখ্যা হাজারের ওপর। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বর্তমান উদ্যোগ থেকে নদ-নদীর সংখ্যা নিয়ে চলে আসা দীর্ঘ বিতর্কের অবসান হতে পারে। ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের সব নদ-নদীর অভিভাবক, নদীর সঠিক সংখ্যা ঠিক করার দায়িত্বও তাদের। এই রায়ে আদালত দেশের সব নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে কতটি নদ-নদী আছে, তার কোনো প্রামাণ্য দলিল ছিল না। পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪০৫টি নদীর যে তালিকা তৈরি করেছে, তার তথ্য ভিত্তি স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের মানচিত্রেও যেসব নদীর উল্লেখ করা হয়, সেটিও পূর্ণাঙ্গ নয়।