৬ বছরে ১৮৯ রোহিঙ্গা খুন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ৯:৫১:২৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে গত ছয় বছরে খুন হয়েছেন ১৮৯ রোহিঙ্গা। অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটেছে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগির জের ধরে। আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ও আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) নামের ওই দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী ছাড়াও আরও ১০-১২টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী আশ্রয়শিবিরে অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটিয়ে চলছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, গত আট মাসে আশ্রয়শিবিরগুলোয় ৫১টি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৬০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। অধিকাংশ খুনের ঘটনা আরসার সঙ্গে আরএসও এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর মধ্যে। সংঘর্ষে আরসার ১৮ সদস্য, আরএসওর দুজন নিহত হন। ছয় বছরে আশ্রয়শিবিরগুলোয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি এবং পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ১৮৯ রোহিঙ্গা।
এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয়শিবিরে শনিবার থেকে যৌথ অভিযানে নেমেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), জেলা পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, আশ্রয়শিবিরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে আজ থেকে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু হচ্ছে। সংগত কারণে অভিযানের সময়টা জানানো যাচ্ছে না। অভিযানে থাকছে এপিবিএন, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। পাশাপাশি সন্ত্রাসীরা যেন আশ্রয়শিবিরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য কেটে ফেলা কাঁটাতারের বেড়া সংস্কার, প্রয়োজনীয়সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরাযুক্ত পর্যবেক্ষণ চৌকি চালু ও আশ্রয়শিবিরে যাতায়াতের সংযোগ সড়কগুলোয় একাধিক তল্লাশিচৌকি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতাদের অবস্থান দেশের বাইরে জানিয়ে সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়ার পালংখালী থেকে আরসার অর্থসম্পাদক মাওলানা মো. ইউনুসকে পাকিস্তানের তৈরি একটি রিভলবারসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, আশ্রয়শিবিরগুলোর নিরাপত্তায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও এখন অর্ধশতাধিক স্থানে কেটে ফেলা হয়েছে। আরসা, আরএসও ও অন্যান্য সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের ছেঁড়া অংশ দিয়ে আশ্রয়শিবিরে ঢুকে খুনখারাবি, অপহরণসহ সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটিয়ে পাহাড়ের আস্তানায় অবস্থান নেয়। রোহিঙ্গা ঢল শুরুর পর গত ছয় বছরে আরসার সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহসহ দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করলেও গোষ্ঠীর মূল হোতাদের এখনো আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। তাতে সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কিত। সন্ধ্যার পর থেকে আশ্রয়শিবিরগুলো সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে।