শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার নেপথ্যে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:৪০ অপরাহ্ন
সম্প্রতি দৈনিক জালালাবাদে ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সারা দেশে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ ব্যাপারে জনৈক বিশেষজ্ঞ বলেন, বর্তমানে সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা মানুষের মনে আঘাত করছে। এর ফলে মানুষের মনে নৈরাজ্যকর অবস্থা কাজ করছে। সম্প্রতি কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে অর্থনৈতিক সমস্যা, পড়াশোনা শেষে যথাসময়ে চাকুরী না হওয়া ও হতাশা শেষে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের জনৈক সহযোগী অধ্যাপক বলেন, বয়সভেদে আত্মহত্যার কারণ ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা, যথাসময়ে চাকুরী না পাওয়া আর্থিক অস্বচ্ছলতা, বেকারত্ব, পারিবারিক চাপ, প্রেমঘটিত জটিলতা, নিঃসঙ্গতা, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হওয়া, ফল আশানুরূপ না হওয়া ও মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশী ঘটছে।
গত কয়েক বছরের আত্মহত্যার পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশী। এছাড়া বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আঁচল ফাউন্ডেশন এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ সালে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৪৪৬ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ততঃ ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ২০২১ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১০১ জন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের তথ্য মতে, দেশে প্রতি বছর ১৩-১৫ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার পেছনের কারণ উল্লেখ করে আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, অভিমান করে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশী। ২৭.৩৭ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে।প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশী। ২০২৬ সালে ৬৩.৯৩ শতাংশ নারী ও ৩৬.১ শতাংশ পুরুষ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে।দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার একটি বড় কারণ হচ্ছে আর্থিক সমস্যা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনাকালে কিংবা পড়াশোনা শেষে হতাশায় আক্রান্ত হতে পারে। যখন একজন শিক্ষার্থীর বা তার পরিবারে আর্থিক সংকট থাকে এবং সে দেখতে পায় যে, পড়াশোনা শেষ করেও তার মতো হাজার হাজার যুবক যুবতী চাকুরী পাচ্ছে না। তখন সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। আবার পড়াশোনা শেষ করে চাকুরীর জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও সে যখন চাকুরী বা কর্মসংস্থানে ব্যর্থ হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই হতাশায় নিমজ্জিত হতে পারে। পরে এই হতাশাবোধই তাকে ধাবিত করতে পারে আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পথে।অনেকের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় জ্ঞানার্জনের জন্য, গবেষণারজন্য, সেখানে আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় একটা ভালো চাকুরীর জন্য। কিন্তু এদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। তবে যদি একটি গবেষণা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা যায় তরুণদের মাঝে যদি ভালো প্রতিষ্ঠানের কর্মী হওয়ার পরিবর্তে উদ্যোক্তা আগ্রহ তৈরী করা যায়, তবে হয়তো কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করা সম্ভব হবে।
যা-ই হোক, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল তথা দরিদ্র দেশে শিক্ষার্থীসহ সকল পর্যায়ে আত্মহত্যার অন্যতম প্রধাণ কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা ও সংকট। তাই এই সমস্যা যদি কমানো যায়, চাকুরী বা কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা যায়, তবে তরুণ যুবাদের হতাশা বহুলাংশে দূর হয়ে যাবে। ফলে হ্রাস পাবে আত্মহত্যার প্রবণতা। এর পাশাপাশি আত্মহত্যার অন্যান্য কারণগুলো নিয়ে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা ও বিষন্নতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে, যা আত্মহত্যার দিকে তাদের ধাবিত করার আশংকা রয়েছে। সর্বোপরি, আত্মহত্যা সমস্যার কোন সমাধান নয়, বরং এটা একটি হীন ও কাপুরষোচিত কাজ এমন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে। আর এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে সচেতন মহলকে সর্বাগ্রে।