আগস্টে ডেঙ্গুতে মৃত্যু অতীত রেকর্ড ছাড়ালো
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ৭:২২:৫৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। এরই মধ্যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৬ দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২৮৬ জনের, যা এর আগে এক বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর চেয়ে বেশি। ২০২২ সালে ৬১ হাজার রোগীর মধ্যে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। এতদিন এটিই ছিল ডেঙ্গুতে এক বছরের সর্বাধিক মৃত্যুর রেকর্ড।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার জানানো হয়, চলতি বছর শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৫৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণহানি ঘটেছে আরো নয়জনের। আর এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে আরো ১ হাজার ৯৬০ জন। এ নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত রোগীর ১ হাজার ১২৭ জনই ঢাকার বাইরের, যা মোট শনাক্তের ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে চলতি বছর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় রোগী ভর্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৬৯৫ জনে। আর রাজধানীর হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ৫৩ হাজার ৪৮৯।
মূলত ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে সরকারিভাবে ডেঙ্গুকে রোগ হিসেবে দেখা হয়। সে বছরই সাড়ে পাঁচ হাজার ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর তাদের মধ্যে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। দুই দশক ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, রোগী ব্যবস্থাপনা এবং এডিস মশা নির্মূলে কাজ করছে সরকার। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা এবং রোগী ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। গত ২২ বছরে দেশে আড়াই লাখের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে মারা গেছে ৮৫০ রোগী।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ হাজার ২৩৬ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৮৪৬ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪ হাজার ৩৯০ জন।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুনে যেখানে ৫ হাজার ৯৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে। আগস্টের ২৬ দিনে ৬০ হাজার ৩৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মে মাসে ১ হাজার ৩৬, জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সারা দেশে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে দুই, মে মাসে দুই, জুনে ৩৪ এবং জুলাইয়ে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে।
চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শুরুতেই সরকারকে সতর্ক করেছিলেন রোগতত্ত্ববিদরা। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা। তিন মাস ধরে রোগী ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিসংখ্যানে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বছর বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। বিষয়টিকে চরম উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছেন রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, রোগটির বাহক এডিস মশা এরই মধ্যে আচরণ বদলে ফেলেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর লক্ষণেও দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হতেও দেখা যাচ্ছে কম। যদিও এর শক সিনড্রোম এখন আরো প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে।