সিলেট- সুনামগঞ্জ সড়ক : মাত্র ৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত হবে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ৭:০৭:২৩ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক এখন হাওরাঞ্চলের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক। ২৫ লাখ মানুষের জেলা সুনামগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রো, কার ও ট্রাক মিলিয়ে প্রায় ১২ শ’ত গাড়ি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। পাঁচ হাজারেরও বেশি সিএনজি চালিত তিন চাকার যানসহ অসংখ্য ছোট ছোট গাড়ি চলছে এই সড়কে। অথচ সড়কটির কেবল সুনামগঞ্জ জেলা শহরের চার কিলোমিটার এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরের দুই কিলোমিটার এ বছর চারলেনে উন্নীত হবে। অন্য ৫৪ কিলোমিটার থাকবে বর্তমানের মতই। সড়কে পরিবহন চালানোয় সম্পৃক্তরাসহ স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, সুনামগঞ্জ সিলেট সড়ক এখন চারলেন হওয়া জরুরি। একইসঙ্গে সুনামগঞ্জ জগন্নাথপুর আউশকান্দি সড়ককে চার লেন করা সময়ের দাবি।
পরিবহন মালিক শ্রমিকদের দেওয়া তথ্য মতে, সুনামগঞ্জের পাঁচটি পরিবহন মালিক সমিতির প্রায় পাঁচশ’ গাড়ি প্রতিদিন সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কে চলাচল করছে। এছাড়া আন্ত:জেলা বাস সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিদিন যাওয়া আসা করছে ৭৬ টি। এসব বাস ছাতক ও দিরাই থেকেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পথ দিয়েই যাওয়া আসা করে। সব মিলিয়ে আন্ত:জেলা বাসের সংখ্যা দেড়শ প্রায়। এছাড়া সারা জেলায় কার, মাইক্রো, হাইয়েক্স আছে প্রায় পাঁচশ’। ট্রাক আছে একশ’ এর মত। যেগুলোর যাতায়াত এই পথ হয়েই। ছোট ছোট যানবাহনও বেড়েছে। জেলায় বৈধ সিএনজি আছে পাঁচ হাজার তিনশ’এর মত। অবৈধ মিলিয়ে সিএনজির সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে যাবে। যার বেশিরভাগই চলছে সুনামগঞ্জ সিলেট মহাসড়ক দিয়ে। জেলায় লেগুনা আছে প্রায় ২০০।
এতো সংখ্যক যানবাহনের চাপ নিতে পারছে না বর্তমানের ২৪ ফুট প্রশস্তের সড়ক। সড়কে ওঠা যানবাহনের কোনটিই স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এক ঘণ্টার সড়ক যেতে হচ্ছে দ্ইু ঘণ্টায়।
আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্য, জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া বললেন, সুনামগঞ্জে জনসংখ্যার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সড়ক ও পরিবহন বেড়েছে। সুনামগঞ্জ সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে চাপ বেড়েছে। সড়কের পাশে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ চালু হয়েছে। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট চালু হবার পর সড়কে চাপ আরও বাড়বে। এখনই এই সড়কের উপর দিয়ে এক হাজার দুইশ’ বড় গাড়ি চলছে। সিএনজি চালিত তিন চাকার গাড়ির ভিড় তো আছেই। আরেকটি বিকল্প পথ সুনামগঞ্জ—জগন্নাথপুর—আউশকান্দি সড়কেরও চওড়া বাড়ছে না। এই অবস্থায় সড়কটি ক্রমশই বিপদজনক হচ্ছে। গেল এক বছর হয় গড়ে প্রতিদিন একটি দুর্ঘটনা ঘটছে এই সড়কে।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুজাউল কবির বললেন, সড়কে গাড়ি ওভারটেকের কোন সুযোগ নেই। এক ঘণ্টার সড়ক দুইঘণ্টায় যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। গাড়ি টানারই সুযোগ মিলে না।
সুনামগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সামাদ বললেন, সড়কে বাস, ট্রাকের ভিড় অনেক বেড়েছে। সিএনজি চালিত তিন চাকার যান, এমনকি নছিমন করিমনও ওঠছে সড়কে। এই অবস্থায় সড়ককে চারলেনে উন্নীত করা ছাড়া উপায় নেই। পাগলা জগন্নাথপুর আউশকান্দি সড়ককেও চারলেনে উন্নীত করতে হবে। এতে এই সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জ শহরে মালামাল পৌঁছাতে কিংবা সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় মালামাল নিয়ে যেতে এক ঘণ্টা সময় কম লাগবে।
সড়কের লাগোয়া শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বললেন, সড়ককে চারলেনে উন্নীত করা এখন সময়ের দাবি। সড়কের পাশে শান্তিগঞ্জ, পাগলা, জাউয়া ও গোবিন্দগঞ্জসহ আরও কয়েকটি ছোট ছোট বাজার আছে। ওখানে ছোট ছোট কিছু যানবাহনও সড়কের উপরেই রাখা হয়। এছাড়া সড়কে ছোট গাড়ির ভিড় আছে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট পর্যন্ত। কম প্রশস্তের ভিড়ে ঠাসা সড়কে দ্রুতগতিতে গাড়ি চললেই দুর্ঘটনা ঘটছে। চারলেনে উন্নীত হলে দুর্ঘটনা এভাবে ঘটবে না। সময়ও সাশ্রয় হবে। শুনেছি শীঘ্রই সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার অংশ এবং শান্তিগঞ্জের টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ চারলেনে উন্নীত হবে। তবে এটা হলে অন্তত. শুরুটা হবে। চারলেনে উন্নীত করার মত বড় প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের এই মেয়াদে হোক, এটিই চাই আমরা।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং বললেন, সুনামগঞ্জ যেহেতু বৃষ্টি প্রবণ এলাকা, বন্যাও হয় প্রায় প্রতিবছরই। এজন্য সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কের ষাট কিলোমিটারকে চারলেনের মহাসড়ক করার তিন হাজার চারশ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা গেল জুলাই মাসে তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। এটি তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর হয়ে এখন প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে আছে। এ ধরণের বড় প্রকল্প প্রস্তাবনার অনুমোদন হতে অনেক যাচাই বাছাইয়ের বিষয় থাকে, এজন্য সরকারের এই মেয়াদে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবার সুযোগ কম। তবে বন্যা পরবর্তী (২০২২ সালের বন্যা) গ্রহণ করা ২৫০০ কোটি টাকার বড় প্রকল্পে সুনামগঞ্জ শহর থেকে সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কমুখী সড়ককে চারলেন এবং শান্তিগঞ্জ অংশে চারলেনে উন্নীত করার প্রস্তাবনা আছে। পাগলা জগন্নাথপুর আউশকান্দি সড়ককেও একইসঙ্গে ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুটে প্রশস্ত করা হবে। এই প্রকল্পটি প্রি একনেকে অনুমোদন হবার পর, একনেকে প্রেরণ করা হবে।