শান্তিগঞ্জে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই কাদা-জলে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ৭:১০:৪৪ অপরাহ্ন
শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি: চল্লিষোর্ধ্ব পারভীন বেগম। শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। স্বামী আবদুস সমাদসহ ৪ জনের সংসার। নিজেদের বসত ভিটা না থাকায় দীর্ঘদিন থেকেছেন ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে নয়াগাঁও গ্রামে মামা শ্বশুরের বাড়িতে। নিজেদের একটি বাড়ি হবে এমন স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি। কিন্তু রিকশা চালক স্বামীর পক্ষে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিলো না। ২০২০ সালে ইউনিয়নের হোসেনপুর পয়েন্ট সংলগ্ন নয়াগাঁওয়ের গুচ্ছগ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহার দিয়ে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের ঘর পেয়ে খুশি তিনি ও তার রিকশা চালক স্বামী।
শুধু পারভীন বেগম নয়, এ গুচ্ছগ্রামে অনিতা দেব, আবদুল বারিক ও আসমা বেগমসহ ২০টি ভূমিহীন পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ১৪টি মুসলিম ও ৬টি সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার সুখে শান্তিতেই বসবাস করছেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ উপহারে। জায়গাসহ তৈরি করা এসব ঘর পেয়ে যারপরনাই খুশি এসব পরিবারের শতাধিক মানুষ। কিন্তু তাদের স্বপ্নের ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়েছে রাস্তায় থাকা কাদা। বর্ষায় বৃষ্টির কারণে সমস্ত গুচ্ছগ্রামের প্রতিটি ঘরের সামনের রাস্তায় কাদা। তারচেয়ে বেশি কাদা গুচ্ছগ্রাম থেকে পাগলা-বীরগাঁও সড়কে উঠার রাস্তায়। কাদার কারণে শিক্ষার্থীরা ঘর থেকে বের হয়ে স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে চান না। বার বার কর্দমাক্ত পথ মাড়ানোর কারণে পা পঁচে যাচ্ছে অনেকের। আত্মীয়-স্বজনদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বেড়াতে আসতে চান না গুচ্ছগ্রামের আত্মীয়ের বাড়িতে। দৈনন্দিন কর্মকা- ব্যহত হচ্ছে এসব মানুষের। বছরখানেক আগে রাস্তা নির্মাণের আবদার জানিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলছেন, আবেদনের কথা তিনি জানেনই না।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নয়াগাঁওয়ের গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাগলা-বীরগাঁও সড়ক থেকে গুচ্ছগ্রামের কলতলা পর্যন্ত কোনো রকমে জুতা পায়ে যাওয়া যাবে। এর পর থেকে বাকী সব অংশে হাঁটু পর্যন্ত কাদা। এই কাদা মাড়িয়েই গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী মহিলারা কলসি ভরে পানি নিতে দেখা যায়। মাথায় খড়ের গাদা নিয়ে অপর এক কৃষক গো-খাদ্য নিয়ে যাচ্ছেন কাদার উপর দিয়েই। এই গ্রামের বাসিন্দারা ইট-পাথরের ব্লক দিয়ে রাস্তাটিকে চলাচল উপযোগী করে তুলার চেষ্টা করলেও ব্লকগুলোই কাদাতে ধেবে গেছে। এতে করে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের। সংবাদকর্মীদের দেখে এগিয়ে আসেন কয়েকজন মানুষ। ঘর পেয়ে খুশি এসব মানুষ তবু তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই কাদা-জলে।
আবদুল বারিক নামের এ গ্রামের একজন বাসিন্দা জানান, বৃষ্টি হলে মাঝখানের মাঠে পানি জমে যায়। আমরা নিজেরা মিলে পানি নিষ্কাশনের একটি ব্যবস্থা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। টানা বৃষ্টিপাত হলে ছোটোখাটো একটি জলাশয়ের মতো হয়ে যায় এ মাঠ। আমাদের দরজায় পানি চলে আসে। এজন্য কাদা বেশি হয়।
তিনি বলেন, রাস্তা নির্মাণের আবেদন জানিয়ে গত বছর পিআইও অফিসে একটি দরখাস্ত করেছিলাম। কোনো কাজ হয়নি। সে দরখাস্তের কোনো খবরও আমরা জানি না। এ বছর আবারও যাবো ইউএনও স্যারের কাছে। ঘরের শান্তি পাইছি কিন্তু রাস্তার কষ্টে ঘরের শান্তি ভোগ করতে দিচ্ছে না।
রাস্তা নির্মাণের আবেদনের ব্যপারে শান্তিগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমার কাছে কোনো আবেদন তারা কেউ করেন নি। আবেদন করলে আমি সে অনুযায়ী বিষয়টি দেখবো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার উজ্ জামান বলেন, পাগলা-বীরগাঁও সড়কে উঠার জন্য যে সড়ক আছে সেটি বেশি জরুরি। আমি চেষ্টা করছি, যত দ্রুত সম্ভব এ রাস্তাটি করে দেওয়ার। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।