উপেক্ষিত জনস্বার্থ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০:১১ অপরাহ্ন
সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে, ঠিকাদারদের কারণে সরকারী প্রকল্পে যদি কোন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যবস্থার জন্য পাঠানো চিঠির কপি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। এদিকে একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘৬ কোটি টাকা হজম করতে সিলেটের সেই সড়কে তড়িঘড়ি কাজ!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভয়ংকর অনিয়ম ধরা পড়েছে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর-মৌলভীবাজার সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে। কোন কাজ না করেই প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজ সম্পন্ন করার সনদ দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৭ আগস্ট ‘কাজ না করেই সরকারি অর্থ লোপাট’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর নড়ে চড়ে বসে সওজ বিভাগ ও তাদের অধীনস্থ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’। দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত তিন দিন থেকে তড়িঘড়ি করে ওই সড়কের ৪ কিলোমিটার কাজের মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ টোল প্লাজা পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্নের চেষ্টা করছে। অথচ এই প্রকল্পের কাজের অর্থ ছাড় দেয়া হয়েছে গত ২২ জুন।
বলা বাহুল্য, ঘটনাটি গোটা দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সেতু ও সড়কে নির্মাণ ও সংস্কার কাজের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনিয়মের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। যখন সংসদে বসে সংসদীয় কমিটি এ ধরনের সরকারী কাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে নানা সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করছেন এবং এ ব্যাপারে চিঠি পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তখন খোদ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও যোগসাগশে এ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগছে, যারা নিজেরাই দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িত তারা কীভাবে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, অসৎ ঠিকাদারদের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করবে?
একথা অনস্বীকার্য যে, রাস্তাঘাট ও সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে অবহেলা ও ত্রুটির কারণে নির্মাণ ও সংস্কারের কয়েক মাস এমনকি কয়েক দিনের মধ্যে এগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে গর্ত ও খাদ। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে এসব রাস্তা ও সড়কে। বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন সকল শ্রেণীর যানবাহনের আরোহী পঙ্গু হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। অথচ রাস্তাঘাট সুষ্ঠুভাবে নির্মাণ ও সংস্কার হলে এতো দুর্ঘটনা ঘটতো না। চলাচলে দীর্ঘ সময় ব্যয়সহ এতো অসুবিধা ও জটিলতা সৃষ্টি হতো না। দেখা গেছে, নির্মিত অনেক রাস্তায় বিটুমিনের অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বৃষ্টিতে বিটুমিন ধুয়ে যাওয়ায় অল্পদিনেই রাস্তা ও সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারী অর্থের অপচয় হচ্ছে। উন্নত দেশের কথা বাদ দিলেও প্রতিবেশী ভারত পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যবহার করা হচ্ছে উন্নত উপকরণ ও প্রযুক্তি। এতে তাদের রাস্তাঘাট হচ্ছে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী। কিন্তু বাংলাদেশে অসাধু স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তা আমলা ও ঠিকাদারদের স্বার্থে মজবুত ও স্থায়ীভাবে কোন রাস্তা বা সড়ক নির্মাণ বা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।এভাবে জনগণের অর্থ যেমন লোপাট হচ্ছে, তেমনি তাদের স্বার্থ হচ্ছে চরমভাবে উপেক্ষিত। এ অবস্থার অবসান হবে কবে, এটাও জানেন না কেউ।