লোডশেডিংয়ে অসহায় মানুষ : সিলেটে ১৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৩:০০:০৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : হঠাৎ করেই সিলেট অঞ্চলে তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে লোডশেডিংয়ের মাত্র বৃদ্ধি পেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অফিস-আদালত বাসাবাড়ি-সর্বত্র ত্রাহী অবস্থা। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরমের কারণে চাহিদা বৃদ্ধি, কম উৎপাদন ও সরবরাহের ঘাটতি থাকায় বিদ্যুৎ এর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় সিলেটে লোডশেডিং হচ্ছে। গত ২/৩ দিন থেকে বিভাগীয় নগরী সিলেটে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য লাঠে উঠতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিনে ৭ থেকে ৮ বার লোডশেডিং হয়। সর্বনিম্ন আধাঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ ২ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুৎ এই আসে এই যায়। যাদের আইপিএস রয়েছে- তারাও বিপাকে। কারণ আইপিএসের ব্যাটারিতে ঠিকমতো চার্জ হয় না।
এদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে নগরজুড়ে পানি সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে ফ্ল্যাটে থাকা বাসিন্দারা পড়েছেন বিপাকে। টানা ১ থেকে ২ ঘন্টা বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তারা পানির ট্যাংকি পূরণ করতে পারছেন না। এতে তারা চরম ভোগান্তির সম্মূখীন হচ্ছেন। অপরদিকে অবর্ণনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে সিসিকের পানি শাখা থেকে চাহিদার অর্ধেক পানিও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে লোডশেডিংয়ের কারণে চতুর্মুখী সঙ্কটে পড়েছেন নগরীর বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগর এলাকায় তাও ১-২ ঘন্টা পরও বিদ্যুতের দেখা মিলছে। তবে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের দেখা পাচ্ছেন না গ্রামাঞ্চলের মানুষ। কখনো টানা ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের ঘটনাও ঘটছে। সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে একদিকে গরমের তীব্রতা বাড়ছে। অপরদিকে লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র ত্রাহি অবস্থা। সহসা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ। গরমের কারণে হঠাৎ বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণে সিলেট অঞ্চলে ৩০ শতাংশ লোডশেডিং করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। কিন্তু অবর্ণনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। এমনকি পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রগুলোও লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে। এতে তাদের পরীক্ষায় ব্যাঘাত ঘটছে।
নগরীর বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আব্দুন নুর বলেন, গত ৩ দিন থেকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। একদিনে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। অপরদিকে ১ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ফিরছে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় পর। শহরের পরিস্থিতি যদি এমন হয়, তাহলে গ্রাম এলাকায় কী হচ্ছে তা কল্পনাই করা যায় না।
নগরীর আম্বরখানা এলাকার মনিরা বেগম নামে এক গৃহিণী জানান, গেল আগস্ট মাসের শেষের দিকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা ভালো ছিল। ভাবছিলাম হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু না, ২/৩ দিন গরম একটু বেশী দেয়ার কারণে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। দিনে তো বিদ্যুৎ যাচ্ছেই, আবার রাতেও যাচ্ছে। রাতে বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণে বাচ্চারা ঘুমাতে পারছে না। অনেক ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের। জানি না এভাবে আর কতদিন চলতে হবে।
নগরীর টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেহা আর্নিকা জানান, এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। দুই শেষন ক্লাস না করেও পুরো পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এরমধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছিনা। যখন পড়ার সময় সন্ধ্যা রাতেও লোডশেডিং হয়, আবার পড়া শেষ করে ঘুমাতে গেলেও লোডশেডিং। ফলে আমরা উভয় সঙ্কটে পড়েছি। ঠিকমতো পড়তেও পারছিনা আবার ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেনা। এভাবে চলতে থাকলে পরীক্ষা রেখে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বো।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সিলেট বিভাগীয় অফিসের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির দৈনিক জালালাবাদকে জানান, বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে ৫৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। কিন্তু বিপরীতে সরবরাহ আছে ৪০০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সিলেট বিভাগে বিউবো পেয়েছে ১৩৮ মেগাওয়াট এবং পল্লী বিদ্যুৎ ২৬২ মেগাওয়াট। ফলে বিভাগে ১৬৬ মেগাওয়াট অর্থাৎ ৩০ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া সিলেট জেলায় বৃহস্পতিবার ২৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১৫৮.২৫ মেগাওয়াট। ফলে জেলায় ৭৫.৭৫ মেগাওয়াট অর্থাৎ ২৬ শতাংশ লোডশেডিং করা হচ্ছে। তাই এই সমস্যা হচ্ছে। এ থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটা সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে গরমের তীব্রতা কমলে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমবে। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলেন, গত কয়েকদিন থেকে রাতে বেশ কয়েক বার বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ ফিরেছে আধা ঘন্টা থেকে দেড়ঘন্টা পর। ফলে অসহ্য গরমে ঘুমানো যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় বাসাবাড়িতে পানি থাকে না। গত তিন দিন ধরে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে গেছেন। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এমনিতেই সিলেট অঞ্চলে জ¦রের প্রকোপ বাড়ছে। এরমধ্যে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।