রিজার্ভ বৃদ্ধিতে জরুরী পদক্ষেপ প্রয়োজন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:৩৪ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘কঠিন সময়ের মুখে রিজার্ভঃ ডলার যাওয়ার চাপ বেশী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানির উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর সরকারের বৈদেশিক ঋণেও ডলারের মজুত বাড়ছে না। বরং প্রতিদিনই কমছে এর মজুত। সামনে সরকারি-বেসরকারি বৈদেশিক ঋণের বাড়তি কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা তথা চাপ, এবং আমদানির বাড়তি চাহিদা নতুন করে ভয় ধরাচ্ছে। বেশী রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় আর বৈদেশিক ঋণ থেকে আসা ডলার রাতারাতি রিজার্ভ বাড়িয়ে দেবে এমন কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, ডলার আসার চেয়ে যাওয়ার পরিমাণ বেশী। তাই এক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সামনে রিজার্ভকে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। এ বিষয়ে এবিবিসি’র প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। বেসরকারি ঋণ মিলিয়ে এ বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সামনে নির্বাচন থাকায় বাইরে থেকে যাদের বিনিয়োগ আসার কথা, তাদের মধ্যেও একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এছাড়া রপ্তানি চাপে আছে। আর আমদামি কমিয়ে আনলেও কতোটুকু আর কমানো যাবে এ প্রশ্ন থেকেই যায়। খুব বেশী কমানো যাবে না, কারণ এর সঙ্গে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ২ বছরে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন অর্থাৎ ৪৮০০ কোটি ডলার থেকে নেমে এখন ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অর্থাৎ অর্ধেকের নীচে। ইতোপূর্বে ডলারের দাম জোর করে দীর্ঘদিন ৮৫ টাকায় আটকে রাখলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা ১২০ টাকায় ওঠেছে। এ জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দাম আর বাড়তি চাহিদার কারণে ডলার বাগে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরো ব্যবস্থাপনা প্রায় ওলট পালট হয়ে যায়। বাজারে ডলারের অস্বাভাবিক দামের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধ্য হয়ে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলোর কাছে। গত জুলাই মাসেই ১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার প্রতি ২ মাস পর পর আমদানির দায় হিসেবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার করে আকু’র বিল শোধ করতে হয়। এভাবে মজুত কমছে। বাজার অস্থির হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও হুন্ডির দৌরাত্ম্য থামাতে পারছে না। ব্যাংকিং চ্যানেল অর্থাৎ সরকারি রেটের চেয়ে অনেক বেশী দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে সেকেন্ডারি বাজার তথা চোরাই বাজারে।
দেশে বর্তমানে রিজার্ভের এই সংকটপূর্ণ অবস্থার জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীল অবস্থার পাশাপাশি ডলার পাচার প্রতিরোধে ব্যর্থতাসহ আরো বহু কারণ দায়ী। শক্ত হাতে ডলার পাচার প্রতিরোধ করা হলে বর্তমানে রিজার্ভে যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা থাকতো। এছাড়া অকাতরে বা নির্বিচারে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা না হলে বর্তমানে বৈদেশিক ঋণের এতো অর্থ ডলারে শোধ করতে হতো না। ডলারের দাম এতো দীর্ঘকাল জোর করে কমিয়ে রাখার পর এখন যখন বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হয়েছে, তখন এক লাফে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে ডলারের দাম। আর ডলারের দাম বাড়ায় সৃষ্টি হয়েছে বহুমুখী অর্থনৈতিক সংকট। এর ফলে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি। প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সরঞ্জাম আমদানি করতে না পারায় কমছে শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন। এতেও বাড়ছে পণ্যমূল্য। খাদ্যসহ দেশের অধিকাংশ পণ্য আমদানি করতে হয়, তাই অব্যাহতভাবে ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। প্রবাসী ও প্রবাসী আয় কিছু বাড়লেও হুন্ডি খেয়ে ফেলছে সেই ডলার। এভাবে এক অভূতপূর্ব সংকটে দেশের অর্থনীতির প্রাণ, পাওয়ার হাউস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আশু জরুরী ও কার্যকর পদক্ষেপ যে প্রয়োজন, এতেও কোন সন্দেহ নেই।