লেখাপড়ার সুযোগ হারাচ্ছে ঝরে পড়া ২০ লাখ শিশু
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০০:৫২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৬.০৮%। এ বছর থেকে সাক্ষরতা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে সরকার। ২০২৫ সাল পর্যন্ত সাক্ষরতা প্রকল্পটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাড়ায়নি। এতে করে ঝরে পড়া ২০ লাখ শিশুর লেখাপড়ার সুযোগ আর থাকছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৬.০৮%। ৭ বছর ও তদূর্ধ্ব প্রায় ২৩.২% জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর, যারা কখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি বা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে। অথচ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা অত্যন্ত জরুরি।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশকে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করতে ‘প্রাথমিক শিক্ষা আইন’ পাস করা হয়। ১৯৯৮ সালে সাক্ষরতা সাফল্যে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক এই সম্মান পাওয়ার পর থেকে সাক্ষরতার হার কমতে শুরু করে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প’ বন্ধ হয়ে যায়। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) সাব-কম্পোনেন্ট চলমান বলা হলেও গত জুলাই থেকে অর্থায়ন বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় গণশিক্ষা কর্মসূচি চালাতে চায় না। অথচ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাক্ষরতা কর্মসূচির বিষয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০২৫ সাল পর্যন্ত সাক্ষরতা প্রকল্পটি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় বাড়ায়নি। মাত্র ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার জন্য প্রোগ্রামটি বন্ধ হয়ে গেলো। এতে ঝরে পড়া ২০ লাখ শিশুর লেখাপড়ার সুযোগ আর থাকছে না।’
সাক্ষরতা নিয়ে লক্ষে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শতভাগ সাক্ষরতা কোনো দেশেই আর সম্ভব না। ৯৯% মানুষকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। কারণ দেশের ২৩.২% জনগোষ্ঠী নিরক্ষর রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।’
‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪’ প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টি করা এবং বিদ্যালয়বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সের নিরক্ষর নারী-পুরুষকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবিকায়ন দক্ষতা প্রদান ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪ জেলার ২৪৮টি উপজেলায় ১৫-৪৫ বছর বয়সের ৪৪.৬০ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষর করা হয়।
চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) সাব-কম্পোনেন্টের আওতায় ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে পিইডিপি-৩ থেকে আগত বিদ্যালয়বহির্ভূত ১ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া কার্যক্রম শেষ হয়। অবশিষ্ট ৯ লাখের মধ্যে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ২ হাজার ৫৩৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এবং ২৫ হাজার ৭১২টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই অবস্থায় কর্মসূচির অর্থায়ন হচ্ছে না।