দিল্লিতে মোদী-হাসিনার বৈঠকে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯:৩৪:২৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদির আবাসস্থলে এ বৈঠক হয়। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন নরেন্দ্র মোদি। এতে তিনি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের
অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় কানেক্টিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় আলাদাভাবে পোস্টটি করা হয়েছে।এর আগে মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লিতে পৌঁছান শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বৈঠকটি শুরু হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এটাই শেষ আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে কানেক্টিভিটি, তিস্তার পানিবণ্টন, জ্বালানি নিরাপত্তা ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।এদিকে, বৈঠকের পর ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি পদস্থ সূত্র বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে অত্যন্ত ‘আন্তরিক, খোলামেলা ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে’। ওই বৈঠকে আরও একবার ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার ‘পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও মৈত্রীরই প্রতিফলন ঘটেছে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ঠিক এক বছরের ব্যবধানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হল।নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার মধ্যে শেষ ‘ইন-পার্সন’ বৈঠক হয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে, যখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছিলেন। আর গতকালের এই বৈঠক হল এমন একটা সময়ে যখন বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের মাত্র তিন বা সাড়ে তিন মাস বাকি।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনকে যেহেতু খুব জোরালো একটা ফ্যাক্টর বলে মনে করা হয়, তাই সে দেশে নির্বাচনের ঠিক আগে দুজনের এই বৈঠকের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তাৎপর্যও ছিল অপরিসীম।এই পটভূমিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা (পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি) রক্ষায় ভারতের দৃঢ় সমর্থন ও সাহায্যের অঙ্গীকার অক্ষুন্ন থাকবে- ভারত বৈঠকে এই আশ্বাস দিয়েছে বলে বিবিসি জানতে পারছে।দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে উভয় দেশের পক্ষ থেকেই যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল বেশ আগে থেকেই।
বিশেষত মাত্র দু’সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যেহেতু দু’জনেই উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে কোনও বৈঠক হতে পারেনি – তাই দিল্লিতে এই বৈঠকের একটা আলাদা গুরুত্বও ছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে বলছিলেন, “ব্রিকসে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা গিয়েছিলেন আয়োজক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রণে।”“আর দিল্লিতে তিনি আসছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিশেষ আমন্ত্রণে – ফলে জি-টোয়েন্টি নিয়ে আমাদের যতই ব্যস্ততা থাকুক দুই নেতার মধ্যে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটা আমাদের করতেই হত।”লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, জি-টোয়েন্টিতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা কিন্তু এই মঞ্চটিকে বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক কূটনীতির স্বার্থেও যথাসম্ভব ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন।দিল্লিতে তিন দিনের এই সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী ছাড়াও তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস), নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবু, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্ডেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল এবং সংযুক্ত আর আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।এছাড়া যেহেতু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারাও একই সময়ে দিল্লিতে থাকছেন, অবধারিতভাবে বাংলাদেশের দিক থেকে চেষ্টা হবে অনানুষ্ঠানিক স্তরে হলেও মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনেরও।নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সরকারের জন্য এই প্রতিটি বৈঠকেরই গুরুত্ব রয়েছে, আর এর জন্য ভারতকে ধন্যবাদও জানাচ্ছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা।তবে বৈঠকে দুই দেশের নেতার মধ্যে কী কথা হয়েছে এনিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে কোন মন্তব্য করেননি বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।