ইয়াবা আসক্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭:১৬:০৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: দীর্ঘদিন ইয়াবা সেবনের কারণে আসক্তদের মধ্যে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা দেখা দিচ্ছে। এই বিষন্নতার কারণে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। আত্মহত্যা প্রবণতার সঙ্গে স্বাস্থ্য ও মানসিক রোগের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। শনিবার রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনে আসা নারী মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসা নারীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৩২২ জন নারীর মধ্যে ১৭৭ জনের আত্মহত্যার ভাবনা ছিল। এর মধ্যে ৯৮ জন কখনও না কখনও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। পাঁচজন চিকিৎসা নেওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন। আর ১৭৭ জন আত্মহত্যাপ্রবণ নারীর মধ্যে ১২২ জন মাদকাসক্ত ছিল। তাদের মধ্যে ১৬৩ জনের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে এবং ৭৪ জন কমপক্ষে একটি মানসিক রোগ ছিল।বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন রাজধানীর শ্যামলীর ঢাকা আহছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করে। এবারের বিষয় ছিল ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা, মাদকনির্ভরশীল ব্যাক্তি এবং আত্মহত্যার উচ্চ ঝুঁকি’।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে মূল আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রের মনোচিকিৎসক বিশেষজ্ঞ ডা. রাহেনুল ইসলাম। এছাড়াও প্রশ্নোত্তর ও আলোচনা করেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সাইক্লোজিস্ট রাখী গাঙ্গুলী ও কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ফারজানা ফেরদৌস।
গবেষণায় দেখা গেছে, নারী মাদকাসক্তরা পুরুষ মাদকাসক্তদের চেয়ে মানসিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে তারা আত্মহত্যার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকে। ঝুঁকিপ্রবণ জনগোষ্ঠী হিসেবে মাদকগ্রহণকারীরা আত্মহত্যা প্রবণতার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছে। এর কারণ নিয়ন্ত্রণ বর্হিভূত মাদকগ্রহণ, বিষন্নতা, অতিমাত্রায় মাদক গ্রহণের কারণে সিদ্ধান্তহীনতা বা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা, চিকিৎসার পরেও মাদকমুক্ত থাকতে ব্যর্থ হওয়া, পরিবারের অসহযোগীতা ও সন্দেহ এবং মাদকাসক্তির কারণে অন্যান্য মানসিক সমস্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৭ লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিবছর আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছেন। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হলো আত্মহত্যা। বিশ্বের মোট আত্মহত্যার ৬০ শতাংশ হয় এশিয়াতে। বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে, ২ ভাবে মানুষ আত্মহত্যাকরে থাকে-আবেগপ্রবন হয়ে এবং পরিকল্পনা করে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি আত্মহত্যা হয় আকো প্রবণ হয়ে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের তুলনায় অ্যালকোহল ব্যবহারকারীরা ১০ গুন বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকির মাঝে এবং যারা শরীরের শিরায় নেশাদ্রব্য গ্রহণ করে তারা ১৪ গুন বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
বর্তমানে দেশের মাদক ব্যবহারের ধরণ পরিবর্তন হয়েছে এবং ইয়াবার সহজলভ্যতার কারণে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে আহ্ছানিয়া মিশনের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইয়াবা উত্তেজক মাদক হিসেবে পরিচিত; যা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুনীরা বেশি ব্যবহার করছে। দীর্ঘদিন ইয়াবা ব্যবহারে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা রোগ দেখা দেয়। এই বিষন্নতার কারণেও ইয়াবা আসক্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যাক্তির কমপক্ষে একটি মানসিক রোগ থাকে সেগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি দেখা গেছে ডিপ্রেশন।প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা বলছেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আত্মহত্যা একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে জাতীয় পর্যায়ে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে, আত্মহত্যার গড় হারে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ৩৮তম দেশ। কিন্তু মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে এই দেশ উঠে এসেছে ১০ স্থানে।গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ১৬ জন, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সেটা দিগুণের বেশি ৩৯.৬। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩২ জন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। কোভিড-১৯ এর সময় ১৪ হাজার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং ২০২২ সালে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।বাংলাদেশে আত্মহত্যার কারণগুলো হচ্ছে, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন, শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতা, পারিবারিক কলহ এবং সম্পর্কের বিচ্ছেদ, মাদকের অপব্যবহার, অর্থনৈতিক সমস্যা, পড়াশোনার চাপ, বেকারত্ব, পারিবারিক আত্মহত্যার ইতিহাস ইত্যাদি। আত্মহত্যার ঝুঁকির লক্ষণগুলো হচ্ছে- মৌখিক হুমকি, ঘন ঘন মৃত্যু সংক্রান্ত ইচ্ছার কথা বলা, যখন দেখছেন আপনার সন্তান বা কাছের মানুষটি হঠাৎ করেই চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে, তার চেহারা, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীন বা ওজন খুব দ্রুত বাড়ছে বা কমছে, ফেসবুক বা স্যোশাল মিডিয়াতে মৃত্যু নিয়ে বেশী পোস্ট বা ঘটনা দিচ্ছে, শরীরে অপ্রত্যাশিত আঘাতের চিহ্ন ইত্যাদি।