শিক্ষার তিমির যাত্রা!
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:২৮ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে বর্তমানে ২৩ শতাংশের বেশী মানুষ নিরক্ষর। কিন্তু বাস্তবে নিরক্ষরতার এই হার অনেক বেশী বলে সচেতন মহলের অভিমত। বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে যখন ঠিকঠাক মতো মোবাইল ব্যবহার করতেও পড়ালেখা জানতে হয়, তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যার এতো বড় অংশ কিভাবে নিরক্ষর রয়ে গেলো, এটা যেমন বিস্ময়কর ও তেমনি হতাশার বিষয়। প্রতিবেশী শ্রীলংকার মত দেশে শিক্ষিতের হারও নব্বই শতাংশের বেশী। অন্যান্য দেশেও এই হার ক্রমশ: বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশ অর্ধ শতাব্দি আগে যে তিমিরে ছিলো, এখনো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। বিগত বছরগুলোতে একশ্রেণীর মানুষ শিক্ষাদীক্ষায় বেশ অগ্রসর হলেও, বেশীর ভাগ মানুষ এখনো পেছনে পড়ে আছে। বিশেষ গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার হার এখনো শোচনীয় পর্যায়ে। জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষার হার। সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষভাবে গণশিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। শহরাঞ্চলে পড়াশোনার ব্যবস্থা ও মান মোটামুটি ভালো হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তা মারাত্মকভাবে শোচনীয়। গত কয়েক বছর যাবৎ শিক্ষা নিয়ে বিশেষভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষা নিয়ে যে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পরিবর্তন চলছে, এতে শিক্ষার্থীরা অনেকটা গিনিপিগের মতো গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার স্যাম্পুলে পরিণত হয়েছে। আজ যে নিয়ম চালু করা হচ্ছে, কিছুকাল পর তা আবার বাতিল করা হচ্ছে অকার্যকর বিবেচনায়। এভাবে এদেশের শিক্ষানীতিসহ গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা এক সীমাহীন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে নিমজ্জিত। ফলে দেশে শিক্ষার উন্নতি হচ্ছে না, বাড়ছে না প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বরং ভারী হচ্ছে নিরক্ষরতার পাল্লা।
সচেতন মহলের মতে, গত এক/দেড় দশক ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি নিয়ে যতো হুলস্থূল হয়েছে, শিক্ষার মান বৃদ্ধি নিয়ে এর সিকিভাগ কাজও হয়নি। স্বজনপ্রীতি, স্বার্থের ভাগাভাগি ও রাজনৈতিক বিবেচনায় এমন সব ব্যক্তি শিক্ষক শিক্ষিকার চাকুরী পেয়েছেন, যাদের শিক্ষক হওয়ার যেমন যোগ্যতা ছিলো না, তেমনি মানসিকতাও নেই। এভাবে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করা হয়েছে, কোটি কোটি কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষা ভবিষ্যতকে ঠেলে দেয়া হয়েছে অন্ধকারে। এ অবস্থা এখনো অব্যাহত। দেশের শিক্ষার অব্যবস্থা যখন এমন, তখন শিক্ষা বিভাগ তথা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল আরেক বিধ্বংসী খেলায় মেতে ওঠেছে। তাদের একটি পদক্ষেপের ফলে দেশের প্রায় অর্ধ লক্ষ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে চলেছে। নিবন্ধনের অজুহাতে এগুলো বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
জানা গেছে, চলতি বছর থেকে সাক্ষরতা কর্মসূচীতে বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ২০২৫ সাল পর্যন্ত স্বাক্ষরতা প্রকল্পটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাড়ায়নি। মাত্র ৮শ’ থেকে ৯শ’ কোটি টাকার জন্য প্রোগ্রামটি বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল ও কম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও দেশের মেরুদন্ডরূপী শিক্ষা ব্যবস্থাকে দৃঢ় রাখতে সামান্য অর্থ ব্যয়েও কুন্ঠিত কর্তৃপক্ষ। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এ ধরনের উপেক্ষা অবহেলা এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের বেড়াজাল থেকে বের করে আনা না হলে, জাতির ভবিষ্যত যে অচিরেই খাদের কিনারায় গিয়ে ঠেকবে বা অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।