গ্যাসে সর্ষের ভূত!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:৫১ অপরাহ্ন
গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘এলপি গ্যাস নিয়ে নৈরাজ্য’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়া অন্যান্য জাতীয় মিডিয়ায়ও এ বিষয়ে সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য হচ্ছে, গত ৩ মাসে উপর্যুপরি ৩ বার বাড়ানো হয়েছে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম। একদিকে সরকারী দাম মানতে পারছেন না ক্রেতারা, অন্যদিকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে সিলিন্ডার অর্থাৎ এলপি গ্যাস। সিলেটে এলপি গ্যাস নিয়ে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। বিক্রেতাদের দাবি, এলপিজি’র পাইকারী দাম সরকার নির্ধারিত খুচরো দামের চেয়ে বেশী। ক্রেতা সাধারণের বক্তব্য হচ্ছে, সরকার বাড়িয়ে মূল্য নির্ধারণ করলেও মানেন না কেউ। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
জানা গেছে, সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর দাম বাড়িয়ে এলপিজি সিলিন্ডারের নতুন দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রতি কেজি এলপিজি’র দাম ১০৭ টাকা ১ পয়সা হিসেবে ১২ কেজির সিলিন্ডারের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১২৮৪ টাকা, যা আগস্টে ছিলো ১১৪০ টাকা। এর আগের মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে তা ছিলো ৯৯৯ টাকা। ১২ কেজি সিলিন্ডার ছাড়াও সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সব সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেটের বাজারে বর্তমানে বসুন্ধরা, যমুনা, বেক্সিমকো, পেট্রোম্যাক্স, ইনডেক্স, নাভানা ইউনিভার্সাল, আরত্তন ইত্যাদি কোম্পানীর এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকার ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১২৮৪ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে কোম্পানী ভেদে সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ থেকে ১৪৫০ টাকা। দাম বাড়ার পর থেকে বাজারে বসুন্ধরা গ্যাসের সংকট রয়েছে বলে একাধিক খুচরো ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে। আবার বাসায় পৌঁছে দেয়া বাবত নেয়া হচ্ছে আরো ৫০ টাকা। ফলে একটি সিলিন্ডারের জন্য গ্রাহককে ব্যয় করতে হচ্ছে ১৫০০ টাকা। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির এ সময়ে বিশেষভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি যখন ১০ শতাংশ কিংবা তার চেয়ে বেশী, সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন মধ্য ও নি¤œবিত্ত পরিবারের লোকজন। নি¤œ আয়ের মানুষের তো পিঠ রীতিমতো দেয়ালে ঠেকে গেছে।
সিলিন্ডার গ্যাস নিয়েও অন্যান্য নিত্যপণ্যের ন্যায় সিন্ডিকেটিং অর্থাৎ কারসাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অধিক সংখ্যক কোম্পানীকে এই ব্যবসায় আসতে দিয়ে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টির পরিবর্তে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠদের স্বার্থের ভাগাভাগিতে একচেটিয়া ব্যবসার অধিকার দেয়া হয়েছে। আইওয়াশ হিসেবে অধিক সংখ্যক ব্যবসায়ীকে এলপি গ্যাসের লাইসেন্স দেয়া হলেও এই ব্যবসা এখন এর এক চতুর্থাংশেরও কম কোম্পানীর হাতে বন্দী বা সীমাবদ্ধ। ফলে যা খুশী তা-ই দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের জিম্মি করে গলাকাটা দাম আদায় করা হচ্ছে। শত অভিযোগ সত্বেও সরকারের উর্ধ্বতন মহল এ বিষয়ে নিরব। এছাড়া দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, কিছু এলপি কোম্পানীকে এলপি গ্যাসের একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দিতে। এ অবস্থায় ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রব ওঠেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। কিন্তু এদিকে নজর দেয়ার কেউ নেই। সর্ষেতে ভূত থাকলে যা হয়, তাই হচ্ছে এক্ষেত্রে।