অবকাঠামো, স্যাটেলাইটসহ বাংলাদেশ-ফ্রান্স দুটি চুক্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯:২৮:৫৫ অপরাহ্ন
এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন মাত্রা : প্রধানমন্ত্রী
জালালাবাদ রিপোর্ট : অবকাঠামো, স্যাটেলাইটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ঢাকা ও প্যারিস। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর উপস্থিতিতে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়।সমঝোতা স্মারকের একটি হল ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মধ্যে ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট বা ঋণ চুক্তি।
এবং অপরটি হল বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম বিষয়ে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের এবং ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এর মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে একটি লেটার অব ইনটেন্ট চুক্তি।এদিকে, সোমবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয় করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনের সূচনা করেছিলেন, তা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। আজ ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক দিন, যা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বিকশিত হচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, ফ্রান্স বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতি, স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উভয়েই আশা করি, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে এই নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ আঞ্চলিক-বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’প্রেস ব্রিফিংয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ তাদের আকাশযানের ওপর আস্থা রাখার জন্য এবং তাদের থেকে উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইট কেনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান।মাখোঁ বলেন, ইউরোপীয় অ্যারোনটিকসে আস্থা রাখার জন্য, এবং ১০টি এ-৩৫২ নেয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। উড়োজাহাজের দিক দিয়ে এয়ারবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড।তিনি বলেন, ফ্রান্স বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। জ্বালানি ও সামরিক খাতের পাশাপাশি সংস্কৃতি, শিক্ষা ও ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে আপনারা ফ্রান্সের প্রতি আস্থা রাখতে পারেন।মাখোঁ শেখ হাসিনাকে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নতুন সাম্রাজ্যবাদের মুখোমুখি। এখন আমরা গণতান্ত্রিক নীতি এবং আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে একটি তৃতীয় উপায় প্রস্তাব করতে চাই –যেখানে আমাদের কোন অংশীদারকে খাটো করা হবে না বা তাদেরকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হবে না।প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা বিশ্বের অষ্টম জনবহুল এই দেশটি তাদের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল রেখেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে, ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের সফরের বিষয়ে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার মোঃ আব্দুল হান্নান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ফ্রান্স ইউরোপের প্রভাবশালী একটি দেশ এবং ভূ-কৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক বিবেচনায় ফরাসি প্রেসিডেন্টের এ সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ফ্রান্সের গুরুত্ব দেয়ার প্রমাণই হলো দেশটির প্রেসিডেন্টের সফর। আশা করা হচ্ছে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের বড় ২২টি অর্থনীতির একটি হবে বাংলাদেশ। সঙ্গত কারণেই ফ্রান্স প্রযুক্তি ও ব্যবসার নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ কারণে শীর্ষ পর্যায়ের এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দফতরও বলেছে, এই সফর দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এক ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যাবে।এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র অন্বেষণে আলোচনা করেন। আলোচনার জন্য সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান। তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এমানুয়েল মাখোঁ। পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে যোগদান শেষে দুই দিনের সফরে রোববার রাতে ঢাকায় আসেন এমানুয়েল মাখোঁ। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ঢাকা সফর করছেন। সোমবার বিকেলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ঢাকা ত্যাগ করেছেন।