অনলাইনে ফুড অর্ডারের প্রবণতা বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫:৫৪ অপরাহ্ন
#মান ও পরিমাণ নিয়ে আছে প্রশ্ন
# স্বাস্থ্য ঝুঁকিরও শঙ্কা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের
মুনশী ইকবাল :
সিলেটে অনলাইনে ফুড অর্ডারের প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে তরুণ তরুণীদের মধ্যে এটা সবচেয়ে বেশি। এতে একদিকে যেমন ঘরে বসে সহজে খাবার হাতে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি নিজে দেখেশুনে খাবার অর্ডার না করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিরও আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকিই নয়, অনলাইনে ফুড অর্ডার করে অনেকে মান ও পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এটিতে ভোক্তা অধিকারের নজরদারী বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মত তাদের।
ছোটোখাটো টিলা-পাহাড় আর সবুজ চা বাগান সাথে নীল জলরাশি মিলে সিলেটের সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করে সবাইকে। রূপের রাণী সিলেটের সুন্দরের পাশাপাশি এ অঞ্চলের রান্নার স্বতন্ত্র স্বাদেরও সুনাম অনেক। সিলেটের সাতকরার বিভিন্ন পদ এখন সিলেট ছাড়িয়ে অন্য অঞ্চলেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এমনিভাবে মানুষের খাবারের অভ্যাসেও এসেছে পরিবর্তন। একটা সময় এসব ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ আস্বাদনের জন্য বাসা-বাড়িই ছিল একমাত্র গন্তব্য। এখন এসব জনপ্রিয় খাবার মিলছে রেস্তোরাঁতেও। এমনকি গতিময় জীবনে ব্যস্ততায় যখন একটুখানি অবসর মেলে না তখন এসব খাবারের স্বাদ নিতে মানুষ ব্যবহার করছে অনলাইন খাবার সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের সেবা। ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি ছোলা, পিয়াজু, ডালপুরিও এখন অনলাইনে অর্ডার হয়। তাছাড়া গ্রিল, বার্গার, রোল, পিৎজা এগুলো তো বেশিরভাগ অর্ডারই অনলাইনেই হয়। তবে এসব অনলাইনে খাবার অর্ডার নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুধরনের কথাই বলেছেন গ্রাহকরা। ইতিবাচক বলতে বাসা-বাড়ি বা অফিসে বসে খাবার পাওয়া যাচ্ছে আর নেতিবাচক বলতে অনেক সময় খাবারের মান ও পরিমাণ কম থাকে।
বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে দেখা গেছে অনলাইনে ফুড অর্ডারের সংখ্যা তরুণ তরুণীদের মধ্যে বেশি। বিশেষকরে তরুণীরা ভিড় ও ঝামেলা এড়াতে বাসায় বসে চাহিদা মতো খাবার অর্ডার করতে বেশি পছন্দ করেন। তবে অনেক সময়ই তারা কাক্সিক্ষত মান ও পরিমাণ পান না বলে অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন অফারের অর্ডার দিয়ে অনেক খাবারের দোকান গ্রাহকদের ঠকিয়ে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় অনেক রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানে দেখা যায় খাবারে কাপড়ের রং, স্বাদ বাড়তে বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানো হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এসব খাবার যদি অনলাইনের গ্রাহকদের দেওয়া হয় তাহলে প্রশাসনের দেখার সুযোগ কম। তাই এ বিষয়ে আলাদা দৃষ্টি দেওয়ারও কথা বলেছেন অনেক গ্রাহক।
নগরীর দাড়িয়াপাড়ার তানজিনা বেগম নামে এক তরুণী জানান, তিনি কদিন আগে তিনি অনলাইনে আস্ত একটি চিকেন গ্রিল অর্ডার করেছিলেন। ঘরে নিয়ে তিনি দেখেন গ্রিলটি ভালোভাবে সেদ্ধ হয়নি। ভেতরে সাদা ও কাঁচার মতো। পরে তিনি গ্রিলটি তেলে ফ্রাই করে তরকারি রান্না করে নিয়েছেন। তানজিনা বলেন, একটি রেস্টুরেন্টে অফারে দাম কম দেখে গ্রিলটি অর্ডার করেছিলাম কিন্তু তা আর খেতে পারলামনা। এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করলেন না কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন সময় ও ঝামেলা এড়াতে আর এসব করিনি। তিনি বলেন, আমার বাসার পাশেই পাঁচভাই, পানসী রেস্টুরেন্ট। চাইলেই তো ওখানে গিয়েই খেতে পারতাম। কিন্তু সময় ও ভিড় বাাঁচাতেই তো অনলাইনে অর্ডার করেছি। এখন আবার যদি সেই অভিযোগ প্রতিকার এসব নিয়ে সময় দিতে হয় তাহলে আমার লাভ কী হলো। তিনি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান।
অনলাইনে ফুড অর্ডারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কতটুকু জানতে চাইলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ফুড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নিয়ম মেনেই খাবার সরবরাহ করে থাকে। সিলেটে আয়তন অনুপাতে রেস্টুরেন্ট থেকে গ্রাহক অব্দি পৌঁছাতে খাবার নষ্ট হওয়ার কথা না। তবে যারা খাবার তৈরি করে থাকে তারা যদি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার তৈরি ও প্যাকেটিং না করে তাহলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যায়। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকির মূল বিষয়টি রেস্টুরেন্টগুলোর উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে।
অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশি পরিচিত ফুডপাণ্ডা। এরবাইরে অন্যান্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানও খাবার সরবরাহ করে থাকে। শুরুতে এদের বেশিরভাগ হোমমেড বা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের খাবারই মূলত সরবরাহ করতো। তবে সবকিছু মিলিয়ে ইদানীং দেখা গেছে সিলেট শহরে অনলাইন খাবার সরবারহ সেবার বিস্তৃতি বেড়েছে। বাড়িতে মেহমান বা বন্ধুবান্ধব আসলে অনেকেই, সহজে অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করেন। অফিস চলাকালে লাঞ্চের অর্ডারও করেন অনেকে। পর্যটকরাও অ্যাপ দিয়ে খাবার অর্ডার করেন। আয়ের পাশাপাশি মানুষের হাতে পছন্দের খাবার তুলে দিয়ে বেশ আনন্দ পাই বলেন ফুডপ্যান্ডা অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার করা খাবার সরবরাহকারী সোহেল।
দাড়িয়াপাড়ার বার্গার কিং নামে খাবারের দোকানে কর্ণধার পারভেজ আহমদ জানান, আমাদের এটা ফাস্টফুডের দোকান। আমরা অর্ডার পেলে গ্রাহকের সামনে খাবার বানিয়ে সরবরাহ করি। তবে ইদানীং আমাদের সবচেয়ে বেশি বার্গার অনালইনে অর্ডার হয়ে থাকে। যারা একবার এসে খেয়ে যান তারা পরবর্তীতে ভালো লাগা থেকেই আমাদের খাবার অনলাইনে অর্ডার করে থাকেন। জল্লারপার পয়েন্টের থ্রি সিন্টার রেস্টুরেন্টর দোকানি জানান, তাদের এখানে পরোটা, সবজি, সিঙারা, খিচুড়ি, মোগলাই, পিয়াজু ও ডালপুরি তৈরি হয়। তিনি বলেন আমাদের ডালপুরির অনেক সুনাম। তাই সরাসরি ডালপুরি খাওয়ার জন্য লোকজন ভিড় করার পাশাপশি ফুডপান্ডার মাধ্যমে অনলাইনেও অনেক অর্ডার হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি ডালপুরি এরপর মোগলাইয়ের অর্ডার আনে অনলাইনে। দোকানি বলেন আমাদের ছোটো দোকান, সবকিছু ওপেন তৈরি করা হয়। তাই লোকজন দেখছেন আমরা কীভাবে খাবার তৈরি করছি।
যেকোনো বিশেষ উপলক্ষকে আরো উপভোগ্য করে রাখতে আজকাল অনেকেই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর স্বাদ নিতে চান। এরমধ্যে রয়েছে সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস ও আখনি। তবে রেস্তোরাঁর ভিড়-ভাট্টা এড়িয়ে বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সবার সাথে বসে মনমাতানো খাবার উপভোগ করার সুযোগ অনেক সময়েই হয়ে ওঠে না। সিলেট শহরের স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া বলেন, ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় রেস্তোরাঁয় যাওয়ার সময় হয় না। আবার মেহমান আসলে ঝটপট খাবারের ব্যবস্থা করা একটু কষ্টকর হয়। তখন অনলাইনে খাবার অর্ডার করি। তিনি বলেন, এটা খুব ভালো একটা ব্যাপার। তবে মাঝেমধ্যে খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। অনেক সময় আমরা যেরকম দেখে খাবার অর্ডার করি তার চেয়ে পরিমাণে কম খাবার পাই আবার কখনও মানও খারাপ মিলে। হুট করে লোকজনের সামনে তখন কিছু করার থাকে না। আবার এসব নিয়ে ভোক্তা অধিকার কিংবা কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করে নিষ্পত্তি করার সময় বা ধৈর্য্য থাকে না। তারচেয়ে আমরা অর্ডারের জন্য রেস্টুরেন্ট চেইঞ্জ বেটার মনে করি।