মাধ্যমিকে শিক্ষক সংকট : বিবর্ণ পাঠদান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৫:১৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : সারাদেশের এমপিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক সংকট এখন চরমে। সারাদেশের ৩০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট সাড়ে ৫ লাখের মতো শিক্ষক-কর্মচারী পদ আছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পদ শিক্ষকের। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ শিক্ষক পদ এ মুহূর্তে শূন্য আছে বলে ধারণা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। এরমধ্যে ৬৮ হাজার পদ শূন্য আছে প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে।
সর্বশেষ ২০২২ সালের জুন থেকে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করেছিলো শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। পরে সে বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিকে ও সেপ্টেম্বরে যাচাই-বাছাইয়ের পর দেখা যায় তখনই দেশে ৬৮ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্য ছিলো। সে হিসেবে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলো এনটিআরসিএ। এই ধাপে মাত্র ৩২ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে, তাদের মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষক যোগদান করতে চাচ্ছেন। এ চক্রে নির্বাচিত নিবন্ধিত শিক্ষক প্রার্থীরা যোগদান করলেও চলতি সংকট কাটবে বলে মনে করেন না বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা। বরং তারা বলছেন, একদিকে বুঝে উঠতে না পারা নতুন পাঠ্যক্রম অন্যদিকে তীব্র শিক্ষক-এই দুইয়ের মাঝখানে এক অসহনীয় যাতাকলে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সংগঠন বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানীর বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বাবুল গণমাধ্যমকে বলেন, এ মুহূর্তে সারাদেশে বহু শিক্ষক পদ শূন্য আছে। ফলে ক্লাস চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক পদ খালি আছে বলে ধারণা কারো কারো। যা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য অন্তরায়। এ পরিস্থিতিতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের দ্রুত যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। আর অতিদ্রুত শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক সংকট কবে নাগাদ কাটবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সংশ্লিষ্ট শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিবন্ধিত প্রার্থী না থাকায় চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সব পদ পূরণ করা যায়নি। এদিকে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগে নতুন শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি দিলেও প্রার্থী পাওয়া যাবে না। আবার চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম শেষ না করেও পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ শিক্ষক সংকট কাটবে সে বিষয় মন্তব্য করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এখন যদি পঞ্চম চক্রে শিক্ষক নিয়োগের জন্য শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করা হয় তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের পদগুলো শূন্য বলে তথ্য দিতে পারেন। তাই নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ই-রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু করা হবে। ই-রেজিস্ট্রেশনের জন্য এক মাসের মতো সময় প্রয়োজন। ই-রেজিস্ট্রেশনের পর শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই বাছাইয়ে আরো দুই মাসের মতো সময় লাগতে পারে। ততোদিনে নতুন প্রার্থীরা চূড়ান্তভাবে নিবন্ধিত হতে পারবেন। এনটিআরসিএ চাচ্ছে ডিসেম্বরেই ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে।
এনটিআরসিএর ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আসলে নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে যে প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয় তাতে আগের শূন্যপদের ‘ব্যাকলগ’ থেকে যায়। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম বেশি শূন্যপদ শূন্যই থেকে যায়। এ পরিস্থিতিতে আসলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের কমিশন গঠনের কার্যক্রমকে বেগবান করা। তা না হলে শিক্ষক সংকট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিত্যসঙ্গী থেকেই যাবে। কমিশনের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ হলে শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। ফলে ‘ব্যাকলগ’ থাকবে না।
নতুন শিক্ষকদের যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, যে আইনি জটিলতা নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সলিসিটর উইংয়ের মতামত এখনো পাওয়া যায়নি। এনটিআরসিএ চাচ্ছে দ্রুত নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে।