কয়েকগুণ টাকায়ও সিলেটে মিলছেনা এনএস স্যালাইন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮:০৩:২১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে ইনজেক্টেবল নরমাল স্যালাইন সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। বিশেষ করে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। কোনো কোনো জায়গায় কয়েকগুণ দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে বলে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ। মূলত ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে ঔষধ কোম্পানী সূত্রে জানা গেছে। ভোক্তা অধিকার বলছে তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে, দাম বেশি রাখার সুযোগ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে সারাদেশে স্যালাইন সংকট দেখা দেওয়ায় সেই রেশ এসে সিলেটেও লেগেছ। তবে সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগামী সপ্তাহে এই সংকট কেটে যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতলের কী অবস্থা তা বলা যাচ্ছে না।
দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। শুরুতে রাজধানী প্রদুর্ভাব থাকলেও পরে সারাদেশে ছড়াতে থাকে। মাঝখানে সিলেটেও বাড়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এতে স্যালাইনের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে। জানাগেছে প্রায় দেড়মাস ধরে সিলেটে নরমাল (এনএস) স্যালাইনের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। আর এই সুযোগে কৃত্রিম স্যালাইন সংকট সৃষ্টি করে সংঘবদ্ধ চক্র ক্রেতার কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
বাজারে মূলত নরমাল স্যালাইনের যে চাহিদা রয়েছে, তার সিংহভাগ যোগান দেয় লিবরা ইনফিউশনস লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। কোম্পানিগুলো সাধারণত ডিএ, নরমাল, ডিএনএস, এইচএস, সিএস স্যালাইন বাজারে সরবরাহ থাকে। আর অপারেশনসহ সাধারণ রোগে আক্রান্তদের এই স্যালাইন প্রদান করা হয়। তবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পরই দেশে স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ, এদিকে চাহিদা বাড়ার পর থেকে দেশের বাজারে কমতে শুরু করে সরবরাহ। বর্তমানে দেশের বাজারে নরমাল স্যালাইনের সরবরাহ কমেছে ৮০ শতাংশ।
কোম্পানীর প্রতিনিধিরা জানান হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চরম সংকট তৈরি হয়েছে। কোম্পানিগুলো বাজারের চাহিদা অনুপাতে উৎপাদন করতে পারছে না। আবার কেউ কেউ বলছেন নরমাল (এনএস) স্যালাইন তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের সংকটের কথা। সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন ৮৭ টাকা দামের স্যালাইন ৫শ টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার এক ফার্মেসি মালিক জানান সিলেটে চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানিগুলো স্যালাইন সরবরাহ করতে না পারায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী ওষুধ কোম্পানি থেকে সরাসরি সরবরাহ পেলেও সাধারণ দোকানিরা মোটেই স্যালাইন পাচ্ছেন না। এতে নরমাল (এনএস) ৮৭ টাকার স্যালাইন কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, সাধারণ দোকানিরা না পেলেও নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ব্যবসায়ীর কাছে স্যালাইনের মজুত রয়েছে। তারা কোম্পানি থেকে সরাসরি কিনে নিচ্ছে। পরে বাজারে সংকট তৈরি করে অধিক দামে বিক্রি করছে। তাই সাধারণ দোকানিরা স্যালাইন সরবরাহ পাচ্ছে না। ক্রেতারা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছে। অনেকেই রোগীর জন্য জরুরি প্রয়োজনে নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও স্যালাইন পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সিলেট নগরীর সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থ জানান, এ বিষয় কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। স্যালাইনের গায়ে যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দেওয়া আছে, তার চেয়ে এক টাকাও বেশি বিক্রি করা যাবে না। যদি বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো আমরা।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, সারাদেশেই নরমাল স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। সেই প্রভাব সিলেটেও পড়েছে। মাঝখানে সিলেটে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে গিয়েছিল, সেসময় চিকিৎসা সেবা দিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। আর গত সপ্তাহে সিলেটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আসা রোগীদের প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন লেগেছে। সেটাও কুলিয়ে উঠেছি। তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী শনিবার থেকে এ সংকট কেটে যাবে।