মাল্টা চাষে স্বাবলম্বী জকিগঞ্জের ইসমাইল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:৫২:৩৮ অপরাহ্ন
এখলাছুর রহমান, জকিগঞ্জ : মাল্টার আদি চাষ চীন দেশে। বাংলাদেশে গত দুই দশক ধরে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার চাষ হচ্ছে। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে মাল্টার চাষ করে আশাতীত সাফল্য পেয়েছেন স্থানীয়রা। জকিগঞ্জের হালঘাটের একটি পরিবার গত ছয় বছর ধরে মাল্টা চাষে চমক সৃষ্টি করে অন্যদের উদাহরণ হয়ে উঠেছে। বাড়ির পাশের জায়গাটি মূল্যবান হলেও সেখানে কাঙ্খিত ফসল ফলানো হয়ে উঠে না কোনো কৃষকেরই। অনেকটা অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে সেটি। এমনই প্রায় পরিত্যক্ত একটি জমিতে বিদেশী ফল মাল্টার বাণিজ্যিক চাষ করে কৃষি বিভাগকে চমকে দিয়েছেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের হালঘাট গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন ও তার পরিবার।
ইসমাইল হোসেন জানান, জকিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী মাঠ কর্মকর্তা বলাই বিশ্বাস প্রথম তাকে মাল্টা চাষের পরামর্শ দেন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৬০ শতক জায়গায় মাল্টা চাষ শুরু করেন তিনি। মাল্টা গাছের চারা, সার, কীটনাশক ও পরামর্শ সবই বিনামূল্যে দেয় কৃষি বিভাগ। মাত্র চার বছরের মাথায় আশাতীত ফলন পেয়ে যার পর নাই খুশী ইসমাইলের পরিবার। যে জমিতে সব মিলিয়ে বছরে ২০ হাজার টাকার ধান পাওয়া যেতো সেখান থেকে গত বছর প্রায় বারো লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। এবার তার মাল্টা বাগান থেকে কমপক্ষে ১৩ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে। এর মধ্যে সার, ওষুধ, রক্ষণাবেক্ষন ও শ্রমিক বাবদ খরচ হবে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। স্থানীয়ভাবে প্রচুর চাহিদা থাকায় এবারো স্থানীয় ভোক্তাদের কাছে পর্যায়ক্রমে খুচরা বিক্রি করছেন। বিদেশী মাল্টার চেয়ে দামে সস্তা। বিদেশী মাল্টা প্রতি কেজি ২৫০/৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও সবুজ দেশী মাল্টা বিক্রি করছেন ১২০ টাকা কেজিতে। যারা একবার নিচ্ছেন তারা আবারো যাচ্ছেন মাল্টা কিনতে। সেপ্টেম্বরে মাল্টা পাকা শুরু হয়। তাই এখন ইসমাইলের পরিবারে অন্য রকম প্রাপ্তির উজ্জ্বল্য। তাদের চোখে মুখে অফুরন্ত হাসি।
প্রতিদিন দৃষ্টিনন্দন ‘ভাই ভাই মাল্টা বাগান’ দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন লোকজন। কৃষি বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জের কৃষকগণ দফায় দফায় পরিদর্শন করেছেন এ বাগানটি। খামার বাড়ি ফার্মগেট ঢাকা থেকে মাল্টা চাষের উপর যে পুস্তিকা প্রকাশ করেছে তার প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে জকিগঞ্জের ইসমাইলের মাল্টা বাগানের ছবি।
জকিগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শেখ ফরিদ জানান, সাইট্রাস ফসলের মধ্যে মাল্টা অন্যতম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৩ সালে ‘বারি মাল্টা-১’ নামে মাল্টার যে উন্নত জাত উদ্ভাবন করে তা দেখতে সবুজ, খেতে সুস্বাদু ও রসালো। শুষ্ক মাঝারী উঁচু জমি যেখানে রোদ পড়ে সেটি মাল্টা চাষের জন্য উপযুক্ত। তিনি বলেন, একবার গাছ লাগালে ১৫-২০ বছর ফল ধরে।
‘সিলেট অঞ্চলে শষ্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প’র আওতায় জকিগঞ্জ উপজেলায় ৬০ শতক জমির ১২টি এবং রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ৩০ শতকের ২০টি মাল্টা বাগান করা হয়েছিল। যথাযথ পরিচর্যার অভাবে তাদের সবাই সমান সাফল্য পাননি। ইসমাইল হোসেনের বাগানটি শুধু সিলেট বিভাগ নয় দেশের অন্যতম একটি মাল্টা বাগান। তাকে দেখে ব্যক্তি উদ্যোগে মাল্টা বাগান করেছেন একই ইউনিয়নের মজলী গ্রামের মঈন উদ্দিন, সুলতানপুর গ্রামের মুসলেহ আহমদ, বারঠাকুরি ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের নজরুল ইসলামসহ অনেকেই।
ইসমাইলের বাবা আসাব আলী জানান, শুরুর দিকে জমিতে মাটি ভরাট ছাড়া তার নিজের খরচ হয়েছে মাত্র হাজার বিশেক টাকা। মাল্টা বাগানে ইসমাইলের সাথে পরিচর্যার কাজ করেন তার বাবা আসাব আলী, ভাই আলী হোসেন ও কাওছার আহমদ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম ফয়সাল বলেন, উচ্চ ফলনশীল মাল্টা বাগানটি দেখে আসবো।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জকিগঞ্জের কৃষক ইসমাইল আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন জকিগঞ্জের মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী। নতুন একটি সম্ভাবনা তিনি উপস্থাপন করেছেন আমাদের সামনে। সঠিক পরামর্শ, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা, সদিচ্ছা, লেগে থাকা আর আন্তরিকতায় সফলতা সম্ভব ইসমাইলই তার দৃষ্টান্ত।