ঢাকা কৃষি মার্কেটে অগ্নিকান্ডে ৫ শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮:২৪:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: রাজধানীর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে লাগা এই আগুন সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে।
এরআগে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৪টার দিকে মার্কেটের ডানদিকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলেও পরে একে একে ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।
মার্কেটটিতে ৫শর বেশি দোকান ছিল। এসব দোকানে কাজ করে ২ হাজারের বেশি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ মার্কেটে সবজি দোকানের পাশাপাশি জুতার দোকান, স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোতে কোটি কোটি টাকার মালামাল ছিল। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে সে বিষয়েও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে অনেকের ধারণা শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথমে হক বেকারি থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে বাতাসে মুহূর্তেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেট বন্ধ থাকায় ফায়ার সার্ভিস প্রথমে এসে ভেতরে ঢুকতে পারেনি। এজন্য আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান কৃষি মার্কেটের কাপড়ের দোকানি মাহবুব হাসান। তিনি বলেন, তার দোকানে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ছিল। তার দোকান ছাড়াও মার্কেটের ৫০০ এর বেশি দোকান পুড়েছে।
এদিকে ভায়াবহ আগুনে অন্যান্য দোকানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জুয়েলারি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের কারণে মার্কেটের সামনে ও ভেতরে থাকা ১৮টি স্বর্ণের দোকান থেকে কোনো কিছু বের করার সুযোগ পাননি বলে দাবি করেছেন দোকানের মালিকরা।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, আলিফ জুয়েলার্স, হেনা জুয়েলার্স, দুবাই জুয়েলার্স, সিঙ্গাপুর জুয়েলার্স, মুন জুয়েলার্স, রিয়াদ জুয়েলার্স ও মা জুয়েলার্সসহ বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে কাঁচা মার্কেটের সামনের অংশের ৯টি জুয়েলার্স এবং ভেতরে থাকা আরো ৯টি জুয়েলার্সের স্বর্ণালংকার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিটি দোকানে দুই থেকে তিন কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার ছিল। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। অন্যদিকে ফুটপাত ও সড়কে দোকান থাকায় ও মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। দুপুরে তিনি ঘটনাস্থলের পরিদর্শন এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর বাজারে আগুন ধরার খবর পেয়ে ৯ মিনিটের মাথায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চলে আসে। রাত ৩ টা ৫২ মিনিট থেকে আমরা এখানে আগুন নির্বাপনের চেষ্টা করি। সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৭ টি ইউনিটের ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করেছে। বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও নৌ বাহিনী সহযোগিতা করেছে।
তিনি আরও বলেন, মার্কেটটিতে কোন সেফটি প্ল্যান নেই। এই মার্কেটটিতে বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেয়নি। এই মার্কেটটা কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। এখানে ভেতরে অনেক ছোট ছোট সাবওয়ে ছিল। ভেতরের যতগুলো রাস্তা এবং বাইরের যে রাস্তা রয়েছে সেগুলোও সরু।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা ছিলো। মার্কেট কর্তৃপক্ষ সেসব নির্দেশনা মোতাবেক কোনো ব্যবস্থা নেননি। বৃহস্পতিবার সকালে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এসময় সেলিম রেজা বলেন, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে কৃষি মার্কেটে ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়েছিলো। আমরা এই মার্কেটে ফায়ার সেফটি পাইনি। আগুন লাগলে নেভানোর ব্যবস্থা যেনো থাকে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আগেই বলা হয়েছিলো। কিন্তু মার্কেট কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপই নেননি।
তিনি বলেন, কৃষি মার্কেটে প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। আশেপাশে পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না। অথচ মার্কেটটিতে বারবার নোটিশ দেওয়া এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে, সচেতনতার প্রোগ্রামে সেভাবে তারা সাড়া দেননি।
এই মার্কেটটা কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। এখানে ভেতরে অনেক সাবওয়ে ছিল। কিন্তু ছোট ছোট এবং ভেতরে যতগুলো রাস্তা এবং বাইরের যে ছোট ছোট রাস্তা, তার পুরোটাই বিভিন্ন মালামাল দিয়ে বন্ধ করা ছিল। এছাড়া পুরো মার্কেটটাই গেট দিয়ে আটকানো ছিল বলেও জানান ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।