সরকারকে তোয়াক্কা করছে না সিন্ডিকেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭:১৪:৩০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: বাজার চলছে বাজারের মতো, ক্রেতাদেরও পণ্য কিনতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন সরকার বারবার তাদের উপড় খড়গহস্ত চালাচ্ছে কিন্তু যে সিন্ডিকেটের জন্য এত কাহিনী তাদের কিছুই করতে পারছে না। এই সিন্ডিকেট সরকারকে তোয়াক্কাই করছে না।বৃহস্পতিবার ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্যমন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চিনির দাম আগেই নির্ধারণ করা ছিল। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ওই দিন এই পাঁচ পণ্যের নির্ধারিত দামের কথা উল্লেখ করে বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে তা কার্যকর হবে। তবে শনিবার পর্যন্ত বিভিন্ন বাজারে সরকার নির্ধারিত পাঁচটি নিত্যপণ্যের নতুন দাম কার্যকর হতে দেখা যায়নি।
সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ডিম প্রতিটি ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫-৩৬ টাকা, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা দামে বিক্রি হওয়ার কথা। এ ছাড়া খোলা চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা এবং প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা, খোলা তেল ১৪৯ টাকা ও পাম তেল ১২৪ টাকায় বিক্রি করার কথা।কিন্তু কোথাও এসব পণ্য এই দামে বিক্রি হতে দেখা যায়নি। আমদানি ও সরবরাহ না বাড়ালে সরকার এবারও পাঁচ পণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবে না বলে দাবি করেছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ও ব্যবসায়ীরা।
এর আগেও সরকার থেকে নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করার পর তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে খোলা চিনি ১০৭ থেকে কমিয়ে ১০৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২ থেকে কমিয়ে ১০৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু সেই দাম ব্যবসায়ীরা মানেননি। তখন বাজারে চিনি ১১২ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।এরপর গত জুনে সরকার প্রতি কেজি চিনিতে ১৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু সেই দামও কার্যকর হয়নি। এখন বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। আলুর দাম সরকার গত ছয় মাসের মধ্যে এই প্রথম নির্ধারণ করে দিল।
গত আগস্টে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিন তেলের দাম কমিয়েছিল। তখন বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৯ টাকা থেকে পাঁচ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা এবং খোলা তেল ১৫৯ থেকে কমিয়ে ১৫৪ টাকা করা হয়েছিল।বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা, ডিম প্রতিটি ১৩ টাকা, খোলা চিনি ১৩৫/১৪০ টাকা কেজি, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন এগুলো শুধু শুধু দাম নির্ধারণ। এগুলো কোনো কাজে আসবে না। খরচের সাথে এসব দাম পোষায় না। আমরা যা দামে কিনে আনি সেই দামের সাথে মিল রেখে বিক্রি করতে হয়। দাম কম হলে তো আমাদেরই বিক্রি বাড়ে কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই। সরকার কিছুর করার থাকলে সিন্ডিকেটের সাথে করে দেখাক। ছোটো ব্যবসায়ীদের সাথে গুতাগুতি করে কী হবে ?পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোল্ড স্টোরেজে বেশি দাম রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি খরচ বেশি। এর সঙ্গে সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য দাম কমছে না। বাজারে লাল ডিম প্রতি ডজন ১৪৫ টাকা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আলু আগের কেনা তাই আগের দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এগুলো শেষ হয়ে গেলে কমে পেলে কমে বিক্রি করব।একজন আড়তদার বলেন, পেঁয়াজ যারা চাষ করে, তারা কম দামে ছাড়ছে না। আমাদেরও বেশি দামে আনতে হয়। ফলে দাম বেশি বিক্রি করতে হয়।জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, তেলের বোতলে এমআরপি লিখে সেটা তো বাজারে আসার সময় দিতে হবে। একটু অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ডিমের দাম ১৫ টাকা পিস উঠেছিল। আমরা অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ টাকায় নিয়ে এসেছি। এখন ১২ টাকা করতে গেলে সেটা ফার্ম পর্যায়ে সাড়ে ১০ টাকায় নামিয়ে আনতে হবে। এটা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেখতে বলুন। ’
সফিকুজ্জামান বলেন, আলু কোল্ড স্টোরেজের গেটে ৩৯, ৪০, ৪১ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এখন হিমাগারে এটা ঠিক করার জন্য একটু সময় দিতে হবে। ডিসিদের ইনভলভ করা হচ্ছে। আমাদের অফিসাররা তো যাচ্ছে। এটার ক্ষেত্রে চার-পাঁচ দিন সময় লাগবে। কোল্ড স্টোরেজের আলুর দাম ২৭ টাকায় নামাতে হবে। ওখানে কমলে ভোক্তা পর্যায়ে আমরা ৩৬ টাকায় আনতে পারবো। ওরা যদি কম দামে না রাখে তখন কোল্ড স্টোরেজের সব আলু সিজ করে নিলামে বিক্রি করবো।
তিনি বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ যেটা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেটা ১৫ টাকা কমাতে হলে ফরিদপুর এবং পাবনার হাটগুলোতে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা খুব দ্রুত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডিসিদের সঙ্গে জুমে মিটিং করবো। ’