একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বটে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:২৮ অপরাহ্ন
গতকাল জাতীয় মিডিয়ায় ‘১৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বৈদ্যুতিক গাড়ি কারখানা হচ্ছে দেশে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে, ইলেক্ট্রিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরীর কারখানা। এরই মধ্যে দেশ বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে প্রবেশ করেছে। এখন তাই এ খাতের কারখানা তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য কারখানা তৈরীতে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ কারখানা করতে ৭৯০ কোটি টাকা যোগান দিচ্ছে ১০টি ব্যাংক মিলে। বাকী টাকা উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করবেন। দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি কারখানায় ঋণ দিতে দু’টি জোট গঠন করেছে ১০ ব্যাংক মিলে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একশ’ একর জমির একাংশের ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে এই কারখানা। কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, এখন চলছে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ। আগামী বছরের মার্চের আগেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তাদের।
জানা গেছে, দেশে স্থাপিত এই কারখানাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রধান উপাদান গাড়ির মূল কাঠামো (বডি), ব্যাটারি, মোটর ও চার্জার তৈরী করা হবে। এতেই প্রায় ৭৫ শতাংশ খরচ হবে। গাড়ির অভ্যন্তরীন নকশা আমদানিতে ব্যয় হবে আরো ২৫ শতাংশ অর্থ। কারখানাতেই তৈরী গাড়ি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বাজারে ছাড়া হবে। পাশাপাশি সারা দেশে পেট্রোল পাম্প সমূহে চার্জ সুবিধা চালুরও পরিকল্পনা করছেন উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে তৈরী হবে মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, বাস ও স্পোর্টস কারের মূল কাঠামো। এই কারখানা করতে খরচ হচ্ছে ৫৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৪০ কোটি টাকা দিতে জোট করেছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন অগ্রণী বিডিবিএল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিআইএফএফএল ও বেসরকারী খাতের ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক। এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। এ ব্যাপারে ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সারা বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। এতে খরচও কম। দেশের ভালো হবে, এই বিবেচনায় আমরা এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছি।
বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি লিমিটেড নামের কারখানায় তৈরী হবে লিথিয়াম ব্যাটারি। কারখানাতে তৈরী ব্যাটারি ২, ৩ ও ৪ চাকার বৈদ্যুতিক গাড়িতে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি সোলার, ডেটা সেন্টার, ইউপিএস, বিটিএসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরী করবে, তা হবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্রান্ডের। এতে ১ বছরে ২ চাকার ৬০ হাজার, ৩ চাকার ৪০ হাজার ও ৪ চাকার ৩০ হাজার গাড়ি উৎপাদন করা যাবে। এতে কর্মসংস্থান হবে দেড় হাজার মানুষের, পরে প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এখানে তৈরী গাড়িগুলো হবে কানেকটেড কার। অর্থাৎ গাড়িতে চার্জ সুবিধাসহ ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে। ফলে গাড়িতে ওঠার পর কেউ কেউ অফিসের কাজ শুরু করতে পারবেন। এসব গাড়ি চার্জ করার জন্য পাম্পে ব্যবস্থা থাকবে, আবার গাড়ির মালিকেরা নিজ বাড়িতেও চার্জ করতে পারবেন। এক চার্জে চলবে ২৫০ কিলোমিটার, এমন সেডান কারের দাম পড়বে ১২-১৩ লাখ টাকা। ৪০০ কিলোমিটার চলা গাড়ির দাম পড়বে ২৮-৩০ লাখ টাকা। এক চার্জে ২৫০ কিলোমিটার চলবে এমন ৭ সিটের মাইক্রোবাসের দাম পড়বে ২৫-২৬ লাখ টাকা। ভ্যান, ট্রাক ও বাসের দাম পড়বে ১৫-৩০ লাখ টাকার মধ্যে। এসব গাড়ি বাজারে ছাড়তে ইতোমধ্যে সব ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার।
দেশে এখন বৈদ্যুতিক গাড়ি চলছে। গত আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশে ৩৪ টি বৈদ্যুতিক গাড়ি চলছে। গত আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশে ৩৪ টি বৈদ্যুতিক গাড়ি নিবন্ধন করেছে, যার সবই আমদানিকৃত। রাজধানীর তেজগাঁও বাণিজ্যিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে চার্জিং স্টেশন।
কার্বন নিঃসরন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বৈদ্যুতিক গাড়ি চালু একটি অন্যতম সহায়ক পদক্ষেপ। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এ নিয়ে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিহত করতে না পারলে বিশ্বে উষ্ণতা বেড়ে এই উপগ্রহ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠতে পারে। বর্তমান সময়ে এর আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে বায়ুসহ পরিবেশ দূষণ বন্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিহত করতে বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি চালুর উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে এজন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এদিকে সরকারের উর্ধ্বতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করি।