কাজে আসেনি ৩২ কোটি টাকার সোলার প্রকল্প শাল্লায় অন্ধকারে পাঁচ গ্রাম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৫৪:১৭ অপরাহ্ন
শাল্লা প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা। তবে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকে অন্ধকারে উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম।আগুয়াই, মৌরাপুর, দত্তপাড়া, শাসখাই ও বিলপুর এই পাঁচ গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো মানুষ।উপজেলার এই পাঁচ গ্রামে বন্যার আগে রহিম আফরোজ সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ছিল। তখনও সারাদিনে ৩-৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পেত এলাকাবাসী। ভয়াবহ বন্যায় ৩২ কোটি ব্যয়ে স্থাপিত সোলার প্রকল্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পটি পুনরায় চালু না করায় এই ৩২ কোটি টাকা ভেস্তে গেছে বলে মনে করে স্থানীয়রা।জানা যায়, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও বন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ঠিকাদারি সোলার প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ ২০১১ সালে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০০ কিলোওয়াট সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ভার্চ্যুয়ালি সোলার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এত টাকার প্রকল্প দিয়ে কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের সফলতা দেখাতে পারেনি। প্রকল্পটি এলাকার মানুষের কোন উপকারে আসেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পূর্ব পর্যন্ত সরকারের দেওয়া রহিম আফরোজ সৌর বিদ্যুতের আওতায় ছিলেন এসব গ্রামের লোকজন। কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবকিছু তছনছ করে ফেলে। বন্যার সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন মানবেতর জীবনযাপন করছে উপজেলার পাঁচটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।দিরাই পিডিবি অফিস সুত্রে জানা যায়, বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। এটি মেরামত করতে হলে অনেক টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। তাই এটি আর পুনরায় চালু সম্ভব নয়।এদিকে, সোলার থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় এবং পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সংযোগের আশায় দিরাই পিডিবি অফিসে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বকেয়া বিলসহ সব মিটার জমা দিয়েছে গ্রাহকেরা। সোলার প্রকল্পের বকেয়া বিলসহ মিটার জমা দিলে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছিলো দিরাই পিডিবি অফিস। কিন্তু পিডিবি কর্তৃপক্ষের কথা ও কাজে মিল নেই বলে জানান এলাকাবাসী। তবে দিরাই পিডিবি অফিসের দাবি কিছু সংখ্যক গ্রাহকরা এখনো বকেয়া পরিশোধ করেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ না থাকায় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ সর্বক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীর। সোলার প্রকল্পের ভেতরে গরু-ছাগল বসবাস করছে। খুঁটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কোনো জায়গায় উপড়ে পড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন, কোনো জায়গায় তা মানুষের মাথা স্পর্শ করছে। দীর্ঘদিন সৌর প্রকল্পটি বন্ধ থাকায় প্রকল্পের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বিকলের পথে। স্থানীয়রা বলছেন এখানে শুধু শুধু সরকারের অর্থের অপব্যবহার করা হয়েছে। সরকারের ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প স্থানীয়দের কোন কাজেই আসেনি বলে জানান তারা।এদিকে, পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি টানানো হয়েছে এই পাঁচ গ্রামে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। কেন সংযোগ পাচ্ছে না এ প্রশ্নের জবাব পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। তবে বিভিন্ন সূত্রমতে, সোলার প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজ কর্তৃপক্ষ যতদিন না তাদের এরিয়া ছেড়েছে বা যতদিন পর্যন্ত তারা অনুমতি না দিবে ততদিন পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি টানানো থাকবে কিন্তু সংযোগ দেয়া হবে না।এ বিষয়ে ২নং হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস বলেন, এই পাঁচ গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের জন্য চরম সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। আমরা এলাকাবাসীর স্বাক্ষর নিয়ে একটা রেজুলেশন তৈরি করছি সেটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জমা দেব। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেখানে পল্লী বিদ্যুতের লাইন পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ দিরাই সাব-জোনাল অফিসের এজিএম মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ সেখানে দেওয়া যাচ্ছে না। এটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তিনি বলেন, উপর মহল থেকে কোন সুপারিশ বা নির্দেশনা আসেনি। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা বিদ্যুতের লাইন মেইনটেইন করে সংযোগ দিতে পারবো।