বন্ধ হোক খোঁড়া অজুহাত!
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:২৬ অপরাহ্ন
সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে সরকার চেষ্টা করছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে দুইদিকের কথাই শুনতে হয়। আমরা চেষ্টা করি, সমন্বয় করে যতোদূর পারা যায় সবদিক সামাল দিতে। দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আপনারা দেখছেন আমরা সব রকমভাবে চেষ্টা করছি। কতগুলো আইটেম আছে যেটা বৈশ্বিক দামের ওপর নির্ভর করে। সেটা আমরা চেষ্টা করি, যে দাম সেটা সমন্বয় করতে। ‘সংসদের ভেতরে বাইরে যে কথাটা একটি মহল বারবার বলছে, আপনার হাতে ট্রিগার আছে কিন্তু আপনি গুলি করেন না, সময় নেন’-এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গুলি করাটাই শেষ সমাধান না। আমরা মনে করি, আমাদের সব রকমভাবে চেষ্টা করতে হবে। এমন কিছু ব্যবস্থা নিলাম যে, হঠাৎ করে সাপ্লাইন চেইন বন্ধ হয়ে গেলো। সেজন্য আমাদের সব দিক লক্ষ্য করেই কাজ করতে হয়। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে তো ভোক্তাদের আরও কষ্ট হবে-কষ্ট বাড়বে।
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি যখন শুধুমাত্র খাদ্য পণ্যেই প্রায় ১০ শতাংশ এবং নিত্যপণ্যের দাম ক’মাস আগে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলংকার চেয়েও বেশী, তখন বাণিজ্যমন্ত্রী পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। বিষয়টি ভুক্তভোগী জনগণসহ সকল সচেতন মানুষকে যুগপৎ বিস্মিত ও হতাশ করেছে। মন্ত্রী বলেছেন, পণ্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে তারা সব ধরনের চেষ্টা করছেন। এর জবাবে সচেতন মহলের বক্তব্য হচ্ছে, সব ধরনের চেষ্টা সত্বেও দেশের কোটি কোটি মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন যে দ্রব্যমূল্যের ওপর নির্ভরশীল, তা যদি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন, তবে তিনি পদত্যাগ করছেন না কেনো? ব্যর্থতার দায় নিয়ে এতো দীর্ঘকাল যাবৎ বাণিজ্যমন্ত্রীর পদ আঁকড়ে ধরে আছেন কেনো? উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী অনেক আগেই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করতেন এবং অন্য কোন যোগ্য ব্যক্তির হাতে এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করতেন। তিনি যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন, অন্য কেউ এসে তা সাফল্যের সাথে করতে পারবে না, একথা তো হলফ করে কেউ বলতে পারবেন না।
বাণিজ্যমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি তথা পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতী নন। তিনি আলোচনাসহ অন্যান্য পন্থায় এটা নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী। কিন্তু একথা ধ্রুব সত্য যে, চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। অর্থাৎ অপরাধীরা সাধারণতঃ নীতি নৈতিকতা ও ধর্মের অমিয় বাণীর প্রতি তোয়াক্কা করে না।
যেসব অসাধু ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা না করে ৪০/৪৫ টাকা কেজির চাল ও পেঁয়াজ ৬০/৭০ টাকা, এমনকি এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করে ভোক্তাদের পকেট কাটে, তাদের নৈতিকতার বাণী শুনিয়ে কিংবা অনুরোধ জানিয়ে বা তাদের সাথে আলোচনা করে যে তাদেরকে এ ধরনের অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখা যাবে না, এটা কি বাণিজ্যমন্ত্রী জানেন না কিংবা বুঝেন না, এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগী মানুষের। তিনি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে সাপ্লাই চেইন অর্থাৎ পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার শংকা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না বা জেনেও না জানার ভান করছেন যে, আইনে মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মতো আইনের কঠোর বিধান রাখা হয়েছে, দৃষ্টান্তমূলক ও প্রতিরোধমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে জঘন্য অপরাধীদের অপরাধ ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখার জন্য। এর ফলে সাময়িক বা আনুষঙ্গিক কিছু ক্ষতি হলেও তা করা উচিত বৃহত্তর জনগণ ও সমাজের কল্যাণের স্বার্থে। অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড বা কারাদন্ড দিলে তার পরিবারের লোকজন অসহায় হয়ে পড়বে, এমন বিবেচনা থেকে এ ধরনের কঠোর শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকলে দেশ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য বা অভয়ারণ্য হয়ে ওঠবে। এতে অপরাধীদের পরিবারের চেয়ে হাজারো গুণ বেশী জনগণের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়বে। মাত্র কয়েকজন অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীকে যদি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মতো কঠোর শাস্তি দেয়া হয়, তবে ৩০/৩৫ টাকার পণ্য থেকে প্রতি কেজিতে দ্বিগুণ অর্থাৎ আরো ৩০/৩৫ টাকা মুনাফা করার জঘন্য প্রবণতা বন্ধ হয়ে যাবে।
এজন্য কিছুদিনের জন্য সাপ্লাই চেইন বা পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলেও অচিরেই তা স্বাভাবিক শৃংখলায় ফিরে আসবে, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কারণ সাপ্লাই-চেইন স্থবির হয়ে গেলে শুধু জনগণই নয়, ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়বে। তাই তারা বেশীদিন ব্যবসা বন্ধ রাখতে পারবে না। তাই মন্ত্রীর সাপ্লাই চেইন বন্ধের যুক্তি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যায়, ডাকাতেরা রাতে ঘরেরে দরোজা খোলা রাখার হুমকি দেয়ার কারণে আমরা দরোজা খোলা রেখে দিতে পারি না। এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দিলেও কেউ তা করতে পারেন না। এক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে সর্বাত্মক প্রতিরোধের। তাই অসৎ সিন্ডিকেটের সাপ্লাই চেইন বন্ধ করে জনগণের পণ্য সরবরাহ বন্ধের হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের। আর্থিক দুঃখ কষ্টের মধ্যে কোটি কোটি মানুষের তিলে তিলে মৃত্যুর চেয়ে দু’চার বা দশজন দুর্বৃত্ত সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও তাদের গডফাদারদের প্রকাশ্যে গুলি করে প্রদত্ত মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবনে দেশ বা জনগণের কোন ক্ষতি হবে না, বরং বেঁচে যাবে মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ঠ কোটি কোটি অসহায় মানুষ।