রোডমার্চ শেষে বৃষ্টিমুখর সমাবেশে গয়েশ্বর- এবারের আন্দোলন ‘ডু অর ডাই’
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯:৩৩:২২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি সিলেটে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো। কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে শুরু হওয়া এ রোডমার্চে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর অংশগ্রহন ছিলো চোখে পড়ার মতো। তবে বিকেল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে রোর্ডমার্চ ও সমাবেশে ছন্দপতন হয় কিছুটা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভৈরব থেকে সিলেটের উদ্দেশে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। সেখানে সভা শেষে দুপুর ১২টার দিকে রোডমার্চের গাড়িবহর সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়। গাড়িবহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোডে পৌঁছানোর পর একটি সমাবেশ হয়। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শেরপুরে আরও দুটি সমাবেশ শেষে রোডমার্চটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে সিলেট এসে পৌছে। এরপর বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে রোডমার্চটি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে যায়। কর্মসূচিতে বিপুল নেতাকর্মী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে যোগ দেন।
ওদিকে, রোডমার্চের শেষে সমাবেশ নির্ধারিত ছিলো সিলেট নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। কিন্তু সিলেটে বেলা ৩টা ৩৯ মিনিটে সিলেটে ব্রজপাত ও ঝড়ো বৃষ্টি শুরু হয়। সময় যত গড়ায় বৃষ্টির বেগও ততটা বাড়ে। এসময় মাঠে থাকা নেতা-কর্মীরা দৌড়ে আশপাশে আশ্রয় নেন। অন্যদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা মঞ্চে আশ্রয় নেন।
রোডমার্চকে বরণ করতে বিকেল ৩টা থেকেই আলিয়ার মাঠে ঝড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সহ হাজার হাজার জনতা। বিকেল ৪টার পূর্বেই মুহুর্মুহু বৃষ্টি উপেক্ষা করে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষমান নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে মঞ্চ থেকে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন জাসাস এর শিল্পীবৃন্দ।
এসময় জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আমরা কর্মসূচি শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, এরই মধ্যে তীব্র বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি কমলেই সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচটি ট্রাকের মধ্যে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। আশপাশে নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড সাঁটিয়েছেন। সেখানে সরকার পদত্যাগের আহ্বান-সংবলিত বার্তা লেখা। মাঠে দলের হাজারো নেতা-কর্মী। অন্যদিকে, সমাবেশস্থলের আশপাশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন।
বৃষ্টিমুখর রোডমার্চ শেষে আলিয়া মাঠে সমাবেশ শুরু হয় মাগরিবের পর। তখনো বৃষ্টি হচ্ছিলো সিলেট নগর ও আশপাশ এলাকায়।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। তিনি বলেন, দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোন অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না। এ আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় বাঁচব, না হয় মরে যাব। সেজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি আন্দোলনের ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার আহবান জানান তিনি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা তো লগি-বইঠা দিয়ে মানুষ মারি না। আমরা তো আগুন দিয়ে মানুষ মারি না। আমরা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াই না। আমরা তো পথচারীদের বস্ত্র হরণ করি না। আমরা হরতাল দিই না।
তিনি বলেন, আমরা এখনো (হরতাল) করি নাই। আর করব না, এমন প্রতিজ্ঞাও করি নাই।
গয়েশ্বর রায় বলেন- ভোট চোরদের মানুষ আর বিশ্বাস করে না। এখানে দিনের ভোট রাতে হয়। এজন্য আমরা স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য, শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করছি। এ লড়াইয়ে জনগণের বিজয় হবেই।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমাবেশে বক্তৃতাকালে বলেন- বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। অংশগ্রহণমূলক, সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন হতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে গণতন্ত্র থাকবে না।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, আরিফুল হক চৌধুরী ও ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল ও খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন ও এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী ও হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস.এম জিলানী, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- এডভোকেট আশিক উদ্দিন, মামুনুর রশিদ মামুন, মিফতাহ সিদ্দিকী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, নজিবুর রহমান নজিব, হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, শামীম আহমদ, সৈয়দ সাফেক মাহবুব, মকসুদ আহমদ, এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন, শাহনেওয়াজ বক্ত তারেক, মির্জা সম্রাট হোসেন, মাহবুবুল হক চৌধুরী, শাকিল মোর্শেদ, আফসর খান, তাহসিন শারমিন তামান্না, নিগার সুলতানা ডেইজী, নিজাম উদ্দিন তরফদার, সুরমান আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন জীবন, সুদীপ জ্যোতি এষ, দেলোয়ার হোসেন দিনার, ফজলে রাব্বি আহসান প্রমূখ।
বৃহষ্পতিবার সকালে ভৈরর শুরু হওয়া রোডমার্চ রাত পৌনে ৮টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এসে পৌঁছে। এসময় সমেবেত জনতা মুহুর্মুহু কড়তালি ও শ্লোগান দিয়ে রোডমার্চের গাড়ি বহরকে স্বাগত জানান।
এদিকে, রোডমার্চ কর্মসূচিকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, সরাইল বিশ্বরোডের মোড় ও কুট্টাপাড়া এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়। এ সময় তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ বিভিন্ন সরকারবিরোধী শ্লোগান দেয়।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ করবে বিএনপি। বিএনপির সমমনা দলগুলোও ঢাকায় কর্মসূচি পালন করছে।