তারাপুর চা বাগানে শ্রমিক অসন্তোষ : রাস্তা অবরোধ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭:৫৬:৪৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বকেয়া মজুরীর দাবী ও বাগানের জায়গায় দোকান নির্মাণের প্রতিবাদে তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা শনিবার বেলা ১১ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তারাপুর চা বাগানের ভেতরের গোয়াবাড়ি রাস্তা অবরোধ করেন। পরে পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। দুপুর ১টার দিকে বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাগানের ব্যবস্থাপক। আলোচনার ভিত্তিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাৎক্ষনিক এই সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বকেয়া মজুরী ও দোকান নির্মাণের ব্যাপারে বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। শ্রমিকেরা ১ সপ্তাহের বকেয়া বেতনের দাবীর ব্যাপারে তারাপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী বলেন, সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের মজুরী দেয়া হয়। কিন্তু কোন আগাম ঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চা শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বকেয়া মজুরী পরিশোধের সময় পাইনি।
বাগানের জায়গায় দোকান নির্মাণের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা চরম অর্থ সংকটে রয়েছি। কৃষি ব্যাংক আমাদেরকে ঋণ দেয় নাই, চা পাতারও দাম নাই। কিন্তু শ্রমিকের চাহিদা অনেক। আর্থিক সঙ্কট দূর করতে নতুন করে কোনো দোকান নির্মাণ হয়নি, আগে থেকে চালু একটি দোকান সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বাগানের আয়ের জন্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তা করা হচ্ছে। এ নিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ করার কিছু নেই। এব্যাপারে চা শ্রমিক পঞ্চায়েত ও শ্রম অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা একাধিকবার এ নিয়ে তাদের সাথে বৈঠকেও বসেছি। কিন্তু তারা কোন ঘোষণা ছাড়াই কাজ বন্ধ করে দেয়ায় বাগান কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সামনে বাগানের নতুন পঞ্চায়েত কমিটি গঠন হবে। এ নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে নানা প্রতিযোগিতা চলছে। বর্তমান পঞ্চায়েত সভাপতি চৈতন্য ও সেক্রেটারি সুনীল বনাম আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্যপ্রার্থী সভাপতি সমর এবং সেক্রেটারি সংগীত দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রথমে একটি পক্ষ রাস্তা অবরোধ করলেও অপর পক্ষ নিরব ছিল। তবে একটা পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে বিভক্তি ঠেকাতে দুই পক্ষই রাস্তা অবরোধে যোগ দেয়। তবে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে তুলে দিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে এসএমপির জালালাবাদ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, তারাপুর চা বাগানের কিছু অংশ জালালাবাদ থানায় আর কিছু অংশ এয়ারপোর্ট থানার আওতায়। রাস্তা অবরোধের খবর শুনে জালালাবাদ থানার এস আই মাহবুব মন্ডলের নেতৃত্বে একটি টীম ঘটনাস্থলে গিয়ে চা শ্রমিকদের রাস্তা থেকে তুলে দেয়। বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে চা শ্রমিকদের নিজস্ব কিছু দাবী দাওয়া নিয়ে অসন্তোষ চলছে। উভয় পক্ষ বসে বিষয়টির মিমাংসা করবে বলে পুলিশকে আশ^স্ত করেছে।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, গত বৃহস্পতিবারের মজুরি চা শ্রমিকরা পাননি। ফলে তারা রাস্তায় নামেন। এমনকি বাগান এলাকায় একটি দোকান নির্মাণ নিয়েও শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। তবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর সিলেটের পরিচালক খুরশেদ আলম বলেন, চা বাগান শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে শ্রম দপ্তরকে জানাতে হয়। কিন্তু তারাপুর চা বাগানের সঙ্কট নিয়ে বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বৃহস্পতিবার একটি চিঠি দিলেও শ্রমিকেরা এ বিষয়ে আমাদের অবহিত না করে কর্মবিরতিতে যাওয়া বেআইনী কাজ করেছেন। আমরা বিষয়টির খোঁজ রাখছি।