গ্যাস সিলিন্ডার না বোমা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৩০:৪৯ অপরাহ্ন
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট এর অধ্যাপক মাকসুদ হেলালি বলেছেন, প্রোপেন ও বিউটেনের সংমিশ্রণে তৈরী হচ্ছে এলপিজি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস, যা মারাত্মক দাহ্য। এটাই বাজারে পাওয়া যায়। খুব খুবই বিপজ্জনক। তার মতে, একেকটি সিলিন্ডার, একেকটি বোমা। কাজেই এলপিজি ব্যবহারে সঠিক নির্দেশনা প্রনয়নের সময় এখনই। তিনি আরো জানান, সিলিন্ডার আপনাআপনি ব্লাষ্ট হয় না। মূলত সিলিন্ডারের তাপমাত্রা থাকা উচিত সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে কোনো কারণে যদি সিলিন্ডারের তাপমাত্রা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি হয়, তখন বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে চুলার পাশে সিলিন্ডার রেখে রান্না করলে দুর্ঘটনার আশংকা সবচেয়ে বেশী। এছাড়া বাংলাদেশে যেসব চুলা তৈরী করা হয়, সেখানে আন্তর্জাতিক কোনো মানদন্ড ব্যবহার করা হয় না। পাশাপাশি কোনো মেয়াদও মানা হয় না।
বাজারে যেসব এলপিজি সিলিন্ডার আসছে, এদের গাঠনিক উপাদান যা ব্যবহার হচ্ছে তা আইন বহির্ভুত মন্তব্য করে তিনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জ্বালানী তেলের চেয়ে ব্যয় কম হওয়ায় পরিবহণে সিএনজি (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) অনেক জনপ্রিয়। রান্নার কাজেও এলপিজি (তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ড২ারের ব্যবহার ব্যাপক বাড়ছে। নিয়মিত তদারকির অভাবে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়িতে, পাম্পে ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস থেকে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৯০ টি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। একই বছর এই সংস্থার হিসাব মতে, গ্যাস লাইন ও সিলিন্ডারের কারণে ৭৬৭ টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার, পর্যাপ্ত তদারকির অভাব, সিলিন্ডার নিয়মিত পরীক্ষা না করা ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যানবাহনের প্রায় ৮০ শতাংশ সিলিন্ডার পুনঃ পরীক্ষা ছাড়াই চলছে। পরিবেশ দূষণ কমাতে যানবাহনে গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয় ২০০০ সালের দিকে। রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার শুরু হয় ২০০৫ সালে। পাইপ লাইনের গ্যাসের ঘাটতির কারণে ২০১৫ সালের পর এটি দেশব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দেশে এখন প্রায় সাড়ে তিন কোটিরও বেশী এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে রান্নার এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার এবং যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনের বহু ঘটনা ঘটেছে। এতে বহু লোক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হতাহত হয়েছে অগণিত লোক। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মূল্যবান সম্পদের। চলতি মাসের ৫ তারিখে সিলেটের একটি সিএনজি পাম্পে বিস্ফোরণে ৯ ব্যক্তি অগ্নিদগ্ধ হন। এদের মধ্যে ৫ জনই মারা গেছেন। এ অবস্থায় গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার নিয়ে কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এখনই সতর্ক হতে হবে। বুয়েটের অধ্যাপকের উপরোক্ত একেকটি গ্যাস সিলিন্ডার একেকটি বোমা সাবধান বাণীকে এখনই আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের অবিলম্বে দৃষ্টি ও পদক্ষেপ কামনা করছি।