যোগাযোগ ব্যবস্থায় অর্ধ শতাব্দি পিছিয়ে থাকা জনপদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮:১৪:৩২ অপরাহ্ন
![](https://dailyjalalabad.com/files/uploads/2023/09/isakolos.jpg)
ফাইল ছবি: ইছাকলস, কোম্পানীগঞ্জ।
জালালাবাদ রিপোর্ট: তথ্য প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এখনও পিছিেেয় সিলেটের অনেক এলাকা। কারো অভিযোগ তারা প্রায় অর্ধশতাব্দি পিছিয়ে আছেন। সম্পদে ভরপুর সমৃদ্ধ জনপদ সিলেটে প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো এমন কিছু জনপদ এখনও বর্তমান। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ কিংবা কানাইঘাটের এসব অঞ্চলের মানুষ কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য জেলা সদরের নাম নিতে ভয় পান। তারা যেন এক বিচ্ছিন্ন জনপদের বাসিন্দা।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে কোম্পানীগঞ্জের ইছাকলস ইউনিয়ন, গোয়াইনঘাটের পূর্ব তোয়াকুল ও পশ্চিম জাফলংয়ের একাংশ এবং কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন। এ চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এখনও যেন বিচ্ছিন্ন জনপদের বাসিন্দা। চলাচল উপযোগী রাস্তা না থাকায় হেঁটে বা নৌকায় যাতায়াত করতে হয় তাদের। পশ্চিম জাফলং ছাড়া বাকি ইউনিয়নে নামমাত্র পাকা রাস্তা রয়েছে।
রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামতে বারবার আবেদন করেও সুফল পাচ্ছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা জানিয়েছেন, যোগাযোগ প্রযুক্তির এই সময়ে তারা ৫০ বছর পিছিয়ে। সরাসরি উপজেলা সদরে তারা যেতে পারেন না। কখনও সিলেট সদর হয়ে কখনও বা অন্য এলাকা হয়ে দাপ্তরিক কাজে উপজেলা শহরে যেতে হয়। সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইছাকলস ইউনিয়নের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। বর্ষায় যাদের নৌকা আছে তারাই শুধু কোম্পানীগঞ্জ সদরে যেতে পারেন। কেউবা সিলেট সদরের শিবের বাজার ও সুনামগঞ্জের ছাতক হয়ে চলাচল করেন। ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান সাজু সড়ক যোগাযোগের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, তাঁর ইউনিয়নে মাত্র দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকা আছে। ইউনিয়নের পুটামারা, টুকেরগাঁও, শিবপুর, পারকুলসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাকে মাইলের পর মাইল হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়।
কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন আরেক বিচ্ছিন্ন জনপদ। ৪০ হাজার বাসিন্দার এ ইউনিয়নটি সুরমা ও লোভা নদী ঘিরে রেখেছে। গত ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে সতিপুর গ্রামসংলগ্ন এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে না। ইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন জানান, এ ইউনিয়নের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রাম মেছা, মনিপুর ও লক্ষ্মীপুর। এ তিনটি গ্রাম হাওরের মধ্যখানে। নৌকা ছাড়া চলাচলের গতি নেই। এ ছাড়া কান্দিলা, বাজেখেল, উজানভাড়াইসহ অন্যান্য গ্রামে কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান নিজের সাউদ গ্রামে কিছু পাকা রাস্তা করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী কাওছার আহমদ সমকালকে বলেন, আমরা বিচ্ছিন্ন জনপদের বাসিন্দা। না আছে রাস্তাঘাট, না আছে সেতু। গ্রাম থেকে সরাসারি যানবাহনে যাতায়াতের সুযোগ নেই।
পিছিয়ে থাকা জনপদের আরেকটি ইউনিয়ন গোয়াইনঘাটের পূর্ব তোয়াকুল। প্রায় ৩০ হাজার জনসংখ্যার এ ইউনিয়নের চদিবদি হাওর, পেকেরখাল লক্ষ্মীনগর, জলুরমুখ ও মুন্সিবাজার এলাকায় কোনো উল্লেখযোগ্য রাস্তা নেই। যানবাহন চলাচল করে না। বর্ষায় সারি নদী হয়ে ও হেমন্তে হেঁটে রাতারগুল-সালুটিকর সড়কে গিয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়াতে হয় বাসিন্দাদের। ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান জানান, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা বেশি খারাপ। ইউনিয়নে পাকা রাস্তা খুবই কম। কর্মসৃজন প্রকল্প বন্ধ থাকায় রাস্তার কাজ করানো যাচ্ছে না। একই উপজেলার পর্যটন এলাকার ইউনিয়ন পশ্চিম জাফলংয়ের দুটি ওয়ার্ডের ১৫ হাজার মানুষ প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বাসিন্দারা হেঁটে বিছনাকান্দি-হাদারপাড়, কেউ বা নদী পেরিয়ে যান চলাচলকারী রাস্তায় ওঠেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী (সম্প্রতি বদলি) ইনামুল কবীর দুর্দশাগ্রস্ত এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ও একাধিক সেতু নির্মাণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম ফারুক হাসান জানান, তিনি নতুন যোগদান করায় উদ্যোগটি কোন অবস্থায় আছে জানেন না। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামীম আহমদসহ একাধিক জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাদের কাছে অনেক ইউপি চেয়ারম্যান রাস্তাঘাটের জন্য বরাদ্দ চান। কিন্তু সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ইউনিয়নগুলোতে সরকারের বরাদ্দ বাড়ানোর প্রত্যাশা করেন তিনি।