১৮ বছরের আগেই বিয়ে হচ্ছে ৫১ শতাংশ মেয়ের
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯:৪৪:১০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের পীড়িতে বসছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি-২০২৩ প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএ-র এই সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে এখন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর ‘বিনিয়োগে অগ্রাধিকার কন্যা শিশুর অধিকার’ প্রতিপাদ্য করে দেশে পালিত হয়েছে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ-কাল অনেক ছেলেমেয়েরা প্রেমের সম্পর্ক জড়িয়ে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবার আপত্তি করলে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কেউ কেউ আবার বিয়ে না দিলে আত্মহত্যা করে কিংবা করার হুমকি দেয়।’ শহর-গ্রাম, ধনী-গরিব সবক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটে বলে সরকারের সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত হেল্পলাইনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
গত ২৪ আগস্ট সমাজ সেবা অধিদপ্তরে গিয়ে জানা যায়, নিজেরা জোর করে বাল্যবিবাহ করছে প্রতি সপ্তাহে এমন দুই-তিনটি ফোনকল আসে ১০৯৮ নাম্বারে। ঐদিনই বরিশাল থেকে এমন একটি ফোন আসে। যে ফোন কলে ১৬ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া মেয়েকে তার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে ঢাকায় আসার কথা জানান বাবা। ১০৯৮-এর ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. মোহাইমেন বলেন, ২০২৩ সালের ৬ মাসে নিজেরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে বিষয়ে ৩৬টি কল আসে। তবে প্রকৃত ঘটনা আরো অনেক বেশি, সব ঘটনার ফোন আমাদের কাছে আসে না।
সংশ্লিষ্টদের মতে করোনা ও এর পরবর্তী সময় যেমন দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাল্যবিবাহের হার বেড়েছে, তেমনি কিশোর-কিশোরীদের বড় একটা অংশ নিজেরাই ১৮ বছর হওয়ার আগে বিয়ে করছে। এছাড়া করোনাকালে শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল ফোন চলে যাওয়ায় পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়া, নিজেদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করা, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমে প্রতারণার শিকার হওয়ার মতো কারণগুলোও বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে তারা উল্লেখ করেন। এর ফলে পরিবারে অশান্তি, শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়া, অল্প বয়সে মা হওয়ার জন্য শারীরিক নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। অনেকেই নিজেকে এক কেন্দ্রিক করে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয় বলে জানান মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এক গবেষণায় দেখা যায় কিশোর-কিশোরীদের ১৪-২৯ বছর বয়সে আত্মহত্যার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে প্রেম ও বিয়ে। ১৮ বছরের আগে শুধু শহরের বিয়ে বেড়েছে তা নয়, মফস্বল শহরগুলো থেকেও আমরা এমন অনেক কেস পাই। মফস্বলের ছেলেমেয়েরা মনে করে প্রেম করে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো বড় স্মার্টনেস। এর ভিডিও ধারণ করাও স্মার্টনেসের অংশ। এ সময় তাদের মানসিক বৈকল্য শুরু হয়। তারা নেশাগ্রস্ত হয়, নিজেদের হাত কাটে। আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থকে।
তিনি আরো বলেন, শিশুদের বোঝাতে হবে নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব স্বাভাবিক। শিশুদের সঠিক শৈশব নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাদের সংবেদনশীলতা, ক্ষমতায়ন হওয়া, ইতিবাচক হতে সহযোগিতা করা এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারার পরিবেশ দিতে হবে।
এ বিষয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো হানিফ বলেন, একজন শিশুর ১৮ বছর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২১ বছর লাগে পূর্ণ মানুষ হতে। এর আগে কোনো মেয়ে যদি মা হয় তাহলে তার নিজের ও শিশুর পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয়। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্মও হতে পারে।