সিলেটে আবার ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল পাশ্ববর্তী মেঘালয়
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ৯:২৪:০৭ অপরাহ্ন
ঘন ঘন ভূমিকম্পে আতঙ্ক
স্টাফ রিপোর্টার : আবারো সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। একইসাথে দেশের বিভিন্ন স্থানেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এতে ক্ষয়ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি। ঘন ঘন ভূমিকম্পে মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্য। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ২।বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুপারভাইজার জহিরুল ইসলাম বলেন, ৬টা ৪৫ মিনিটে ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল ভারতের মেঘালয়। এটি মৃদু ভূমিকম্প।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সজিব হোসাইন ভূমিকম্পের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটির উৎপত্তিস্থল সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্য।ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির তথ্য অনুযায়ী, ৫ দশমিক ২ মাত্রার এ ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মেঘালয়ের রেসুবেলপাড়া থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনে ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।অ্যানড্রয়েড আর্থকোয়াক অ্যালার্ট সিসটেম বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল পাঁচ দশমিক তিন। এর উৎপত্তিস্থল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রেসুবেলপাড়া থেকে তিন কিলোমিটার দূরে।
এদিকে, ভূমিকম্পে সিলেটে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভূমিকম্পের সময় লোকজনকে আতঙ্কে বাসা-বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে।
সিলেট নগরের রায়নগর এলাকার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন জানান, হঠাৎ ভূমিকম্পে আমাদের বহুতল বাসা কেঁপে ওঠে। বেশ কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিলো। ঝাঁকুনির মাত্রা বেশ শক্তিশালী ছিল। বাসার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হুড়োহুড়ি করে সবাই নিচে নামেন।
একইরকম অনুভূতির কথা জানান নগরের আরো অনেক এলাকার বাসিন্দারা। তারা জানতে চান, কেন ঘন ঘন সিলেটে ভূমিকম্প।সিলেট লাগোয়া ভারতের এসব রাজ্যে ভূমিকম্পের বেশ কয়েকটি ফল্ট সক্রিয়। এসব ফল্ট বিশেষজ্ঞদের কাছে দুশ্চিন্তার বড় কারণ। বারবার ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পেরই আভাস বলছেন বিশেষজ্ঞরা।তারা বলছেন, ভারতের আসাম, মেঘালয়, ডাউকি এলাকায় অনেকগুলো সক্রিয় ফল্ট রয়েছে। এসব ফল্ট প্রায়ই ঝাঁকুনি দিয়ে সরে যেতে চাচ্ছে। এতে প্রায়ই ছোট ছোট ভূমিকম্প হচ্ছে। এতে বুঝা যায় বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বড় ভূমিকম্প হয় তাহলে সিলেট অঞ্চলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বড় ভূমিকম্পের প্রভাব দেশের অন্যান্য জেলাতেও পড়বে। কারণ একটি বড় ভূমিকম্প হলে এর স্থায়িত্ব এবং ব্যাপ্তি বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকা জরুরি।
শাবিপ্রবির পূর ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বিভিন্ন সময় বলেছেন, ছোট ছোট এসব ভূকম্পন বড় ধরনের ভূমিকম্পের অভাস দেয়। ভৌগলিক অবস্থান, গঠন এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে সিলেট।গত সেপ্টেম্বর মাসে ৩ বার দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত। এ ছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা।আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি অনুভূত হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এর আগে ১৪ আগস্ট আরেকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়।
এদিকে, ২০২১ ও ২২ সালে কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর ঝুঁকি মোকাবিলায় নড়েচড়ে বসে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সে সময় নগরীর রাজা ম্যানশন, মিতালী ম্যানশন, মধুবনসহ ২২টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও ৭০টির মত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেই দায় সেরেছে সিটি কর্পোরেশন। থমকে আছে নগরীর বহুতল ভবনগুলোর ভূমিকম্পের সহনীয়তা পরীক্ষার উদ্যোগও। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, কয়েকটি ভবন অপসারণ করা হয়েছে। সচেতনতা তৈরিতেও চলছে কাজ।