ছাতকে বোন হত্যায় ভাই গ্রেফতার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৩৫:৩৪ অপরাহ্ন
ছাতক সংবাদদাতা: সুনামগঞ্জের ছাতকে ৯ বছর বয়সী স্কুলছাত্রী ইভা বেগম খুনের ঘটনায় তাঁর আপন ভাই রবিউল হাসানকে (২০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে তাঁর বোন খুনের ঘটনায় জড়িত বলে থানা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে রবিউল হাসান তাঁর আপন ছোট বোন ইভা বেগমকে খুন করার পর লাশ খন্ডিত করে ক্ষেতের জমিতে এক স্থানে লাশ অন্য স্থানে মাথা ফেলে দিয়েছিলো বলে পুলিশকে জানায়।
শুক্রবার রবিউল হাসানকে গ্রেফতারের পর পুলিশ তাঁর কথামতো ইভা বেগমের মাথা ক্ষেতের জমি থেকে উদ্ধার করে। বোন হত্যাকারী রবিউল হাসান উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি গ্রামের মোশাহিদ আলীর পুত্র। সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) রনজয় চন্দ্র মল্লিকের নেতৃত্বে পুলিশি ব্যাপক তৎপরতায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ইভা হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে। শুক্রবার রাতে হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামি রবিউল হাসান (২০)কে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাঁকে সুনামগঞ্জ জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত ৪ অক্টোবর রাতে দক্ষিণ কুর্শি গ্রামের আতাউর রহমানের ধান ক্ষেতে মাথাবিহীন অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় ইভা বেগম নামের এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটির পিতা মোশাহিদ আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সে সময় থেকেই শিশুর ভাই রবিউল হাসানের কথাবার্তা পুলিশের কাছে সন্দেহজনক মনে হলে তাকে একদিন পুলিশ প্রহরায় রাখা হয়। পরে তাঁকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায় সে তার বোন ইভা হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
রবিউল হাসান জানায়, দক্ষিণ কুর্শি গ্রামের সে এবং লিকসন উরফে আক্কেল মিয়া ও হোসেন একই গ্রামের খালেদ হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন হাজতে ছিলো। ওই হত্যা মামলার বাদী আহমেদ আলী। উচ্চ আদালতে জামিনে মুক্ত হয়ে রবিউল হাসান ও অন্যান্য আসামিরা আহমেদ আলী, মুজিবুর রহমানদেরকে খুনের মামলা দিয়ে শায়েস্তা করে পূর্বের খুনের বিষয় আপোষ নিষ্পত্তির লক্ষে পরিকল্পনা করেই তারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
যেভাবে ইভাকে খুন করা হয়: গত ৪ অক্টোবর রবিউল হাসান তাঁর ছোট বোন ইভাকে মোবাইলের মিনিট কার্ড আনার জন্য গ্রামের একটি দোকানে পাঠায়। মিনিট কার্ড কিনে দোকান থেকে বাড়ি আসার পথে আসামিরা শিশু ইভাকে আক্কেলের বাড়ির খড়ের ঘরে নিয়ে যায়। এখানে আসামিরা ইভার মুখ, মাথা ও পা চেপে ধরে একটি রামদা দিয়ে ঘাড়ে কোপ মেরে মাথা দেহ থেকে আলাদা করে ফেলে। পরবর্তীতে আসামিরা ছুরি দিয়ে ইভার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে জখম করে। তারা ইভার দেহ আতাউর রহমানের ধান ক্ষেতে এবং মাথা লিটনদের জমিতে ফেলে রেখে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামি রবিউল হাসানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে ইভার মাথা লিটনদের জমি থেকে উদ্ধার করা হয়। ইভা বেগমকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আসামি রবিউল হাসান শনিবার আদালতেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে। আসমিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) রনজয় চন্দ্র মল্লিক ও ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ আলম আসামি রবিউল হাসানকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অন্যান্য পলাতক আসামিদেরকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাস্থল জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তগণ পরিদর্শন করে দ্রুত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।