রায়হান হত্যার ৩ বছর আজ : চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩১:৪৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নগরীতে বহুল আলোচিত পুলিশী নির্যাতনে রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যার ৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতন করা হয়। পুলিশের নির্মম নির্যাতনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। মামলার ৩ বছর পর এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। এখন পর্যন্ত ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৬ জন তাঁদের সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রায়হান হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম এ ফজল চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন হবে। বিচারপ্রক্রিয়া শেষে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলায় সর্বশেষ সাক্ষ্য দিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩ এর বিচারক শারমিন খানম। ১২ অক্টোবর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. আওলাদ হোসেন, মুহিদুল ইসলাম ও সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল বাতেন এবং সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম বলেন, রায়হানের মৃত্যুর মাত্র ১৫ মাস আগে বিয়ে করেছিল। রায়হান মারা যাওয়ার দুই মাস আগে তাঁর একমাত্র মেয়ের জন্ম হয়েছিল। নাতনি আলফা আক্তারের বয়স এখন তিন বছর। মেয়েটি বাবার আদর ছাড়াই বড় হচ্ছে। সে কোনো দিন বাবা ডাকতে পারবে না। এমন চিন্তা মাথায় এলে ঘুম আসে না, খেতে রুচি হয় না।
সালমা বেগম বলেন, ‘আসামিরা সাক্ষ্য গ্রহণের আগে মামলা আপস করতে ৫০ লাখ টাকার লোভ দেখিয়েছে। তবে আমরা লোভে পা দিইনি। আশা করছি, আমরা ন্যায়বিচার পাব। সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্যরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)। গত বছরের ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় অভিযুক্ত এক পুলিশ সদস্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমান এখনো পলাতক। বাকি চার আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মালামাল ক্রোকের আদেশ তামিল করেছে পুলিশ।
এদিকে মামলার প্রধান অভিযুক্ত সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে গত ১০ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতির পিটিশন দাখিল করেছেন।