সিলেটের ২৭ লাখ শিশু খাচ্ছে কৃমিনাশক ট্যাবলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১:০০:৪৩ অপরাহ্ন
জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ
স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশের ন্যায় সিলেটজুড়ে চলছে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ। রোববার থেকে শুরু হয়েছে শিশুদের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর কার্যক্রম। এই ক্যাম্পেইন চলবে আগামী শনিবার (১৪ অক্টোবর) পর্যন্ত। সপ্তাহব্যাপী চলমান ক্যাম্পেইনে সিলেট বিভাগের ৫ থেকে ১৬ বছরের ২৭ লাখ ৩২ হাজার শিশুকে খাওয়ানো হবে কৃমির ট্যাবলেট। সেই লক্ষ্যে বিভাগজুড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয়ে চলছে ক্যাম্পেইন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ২৭ লাখ ৩২ হাজার শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর কার্যক্রম রোববার থেকে শুরু হয়েছে। বিভাগের ৪ জেলার সিভিল সার্জন ও শিক্ষা অফিস এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। সকল স্কুলে চলবে এই ক্যাম্পইন। ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী সকল শিশুকে এই ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে।
জানা গেছে, প্রাথমিকের পাশাপাশি দেশের সব সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালনের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয় মাউশি।
এ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীসহ ১২-১৬ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী ও বিদ্যালয় বহির্ভূত (পথ শিশু, কর্মজীবী শিশু ও বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী) সব শিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে এক ডোজ কৃমি নাশক ওষুধ (এলবেন্ডাজল ৪০০ মি.গ্রা.) খাওয়ানো হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৮ থেকে ১৪ অক্টোবর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালনের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়াসহ নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ প্রতিপালন করার জন্য অনুরোধ করা।
নির্দেশনাগুলো হলো: ১। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা প্রধান শিক্ষকদের ৮ থেকে ১৪ অক্টোবর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৮তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালনের নির্দেশনা দেবেন। ২। সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসাররা নিজ নিজ ক্লাস্টারের বিদ্যালয়গুলোতে কার্যক্রমটি সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের বিষয়টি নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করবেন। ৩। শিক্ষকরা যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে উভয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের এ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। ৪। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো ছকে এ কার্যক্রমের তথ্য স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সরবরাহ করতে হবে। এ বিষয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, নগরীর পুরনো ২৭টি ওয়ার্ডে ৮০ হাজার শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর কার্যক্রম চলছে। এছাড়া বর্ধিত আরো ১৫টি ওয়ার্ডের জন্য ৬০ হাজার শিশুকে এই ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সবমিলিয়ে নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে। ইতোমধ্যে সকল ওয়ার্ডে এই ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।
সিলেটের ডেপুটী সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় শংকর দত্ত দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেট জেলায় ৮ লাখ ৩৮ হাজার শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার সকল পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিশু বাকী থাকলে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হবে।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ হোসেন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৬ লাখ ৫০ হাজার শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসের সাথে সমন্বয় করে জেলাব্যাপী এই কার্যক্রম রোববার থেকে শুরু হয়েছে।
হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মো: নুরুল হক দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, চলমান কৃমি সপ্তাহে হবিগঞ্জ জেলায় ৫ লাখ ৭০ হাজার শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় কৃমি সপ্তাহে ৫ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার (৮ অক্টোবর) থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। ক্যাম্পেইন সফলে বিস্তারিত পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আজকের শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতিয়ার। তাই তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা অত্যন্ত জরুরি। কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উদ্যাপনের মাধ্যমে শিশুদের কৃমির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই কার্যক্রমকে সফল করতে অভিভাবকবৃন্দসহ সকল নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে।