দেশে করোনা টিকা উৎপাদনে দুই বছরেও অগ্রগতি নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ৯:১৮:০৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: করোনাভাইরাসের অতিমারির সময়ে দেশে একটি টিকা উৎপাদনকেন্দ্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেটিও ২০২১ সালে। এরপর এই প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তোড়জোড় শোনা গেছে, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখন পর্যন্ত শুধু ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়নি; দরপত্র আহ্বান তো আরও পরের ব্যাপার। অথচ এটি সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের একটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকালে বিষয়টি নিয়ে যতটা আগ্রহ দেখা গেছে, সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আগ্রহে ভাটা পড়েছে। সঙ্গে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তবে এই টিকা উৎপাদনকেন্দ্রে শুধু করোনার টিকা তৈরির কথা নয়, আরও ১২ ধরনের টিকা উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। সম্প্রতি সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে টিকা উদ্ভাবন ও প্রয়োগের কথা বলছেন স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে দেশেই টিকার উৎপাদন করা গেলে সেটি সর্বজনীন করা যেত। সে ক্ষেত্রে এই টিকা উৎপাদনকেন্দ্রটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত বলে মনে করছেন তারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘টিকা উৎপাদনকেন্দ্রটি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থেকে টিকা আমদানি করা হয়। দেশে টিকা উৎপাদন করা গেলে টিকা যেমন সহজলভ্য হবে, তেমনি সেটি অর্থনৈতিক দিক দিয়েও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এটি স্বাস্থ্য খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথ মসৃণ করবে। ডেঙ্গু কিংবা করোনার মতো টিকা উৎপাদন করতে পারলে সেটি অভাবনীয় হবে।’
জানা গেছে, ২০২১ সালে করোনার টিকা দু®প্রাপ্য হয়ে ওঠায় সংসদীয় কমিটি দেশেই টিকা তৈরির সুপারিশ করে। তখন পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট ও ইনস্টিটিউট স্থাপনের চিন্তা করে সরকার। এরপর দেশে সরকারিভাবে করোনার টিকা উৎপাদনের সম্ভাব্য যাচাইয়ের কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) গোপালগঞ্জ জেলায় কারখানা স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়। তবে গত দুই বছরের বেশি সময়েও এই প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। ইডিসিএল, এডিবি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। তাদের চাহিদামতো ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং হয়েছে। ফিজিবিল্যাটি স্টাডি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ইডিসিএলের নিজস্ব অর্থায়নে গোপালগঞ্জের কারখানার কাছে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। টিকা উৎপাদনের জন্য সব ধরনের কারিগরি সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেছিলেন, টিকা উৎপাদনকেন্দ্র হয়ে গেলে আর টিকা আমদানির প্রয়োজন হবে না।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ইডিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। মাস দু-এক আগে ইডিসিএলের একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘টিকা উৎপাদনকেন্দ্রে করোনা ছাড়াও ১২ ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি হবে। বিদেশি একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এর বাইরে অগ্রগতি সম্পর্কে আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে ইডিসিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
তবে এ বিষয়ে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এহসানুল কবির জগলুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) নার্গিস খানম বলেন, ‘প্রকল্পের ডিপিপি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ডিপিপি অনুমোদনের পর বিধি অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করা হবে। এরপরই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে।’