ডিমের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাধা ৩৩% আমদানী শুল্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ৮:৫৪:৫৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: বাজার অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে গত মাসে প্রথম ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত তিন দফায় ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ডিম আমদানি করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এজন্য ডিম আমদানিতে আরোপিত শুল্ক হারকে দায়ী করছেন তারা।ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৩৩ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে আমদানি করতে হলে প্রতিটি ডিমে অতিরিক্ত ব্যয় হয় প্রায় ২ টাকা। এ অতিরিক্ত ব্যয় পরিশোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মূল্যে ডিম বাজারজাত করা আমদানিকারকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিম আমদানিতে শুল্ক হার কমানো প্রয়োজন।
আমদানি অনুমতির খবর প্রকাশের পর গত মাসে বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমে যায়। কিন্তু চলতি সপ্তাহে তা আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৭০ টাকার বেশিতে উঠে গিয়েছিল। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সে হিসেবে প্রতি ডজন ডিমের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৪৪ টাকা। যদিও এ ঘোষণা বাজারে প্রভাব ফেলেছিল সামান্যই।
এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়ার তথ্য জানায় সরকার। তৎক্ষণাৎ বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম নেমে আসে ১৫০ টাকায়। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তা আবারো বাড়তে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীতে এখন প্রতি ডজন ডিম ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ডিম আমদানি করতে পারেননি অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা। কাস্টমস ট্যারিফের তালিকা (২০২৩-২৪) অনুযায়ী ডিম আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ রয়েছে। সব মিলিয়ে পণ্যটি আমদানিতে মোট শুল্ক-করভার ৩৩ শতাংশ। ডিম আমদানির অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের এ শুল্কহার পরিশোধ করেই ডিম আমদানি করতে হবে।
আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩৩ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমদানি করলে প্রতিটি ডিমের পেছনে তাদের খরচ পড়বে ১০ টাকা ২০ থেকে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে পণ্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ডিম আমদানির সাহস করতে পারছেন না। পাশাপাশি রয়েছে এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা। ডলার সংকটের কারণে অধিকাংশ ব্যাংকই এলসি খুলছে না। আবার যেসব ব্যাংক খুলছে তারাও ডলারের দাম ধরছে বেশি। এতে এখানেও খরচ বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছে। আগামী সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে অল্প পরিমাণে ডিম আমদানি করা হবে বলে জানা যায়।
এ পর্যন্ত মোট ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইমপোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় আরো ছয় প্রতিষ্ঠানকে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে চিজ গ্যালারি, পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট, এমএস রিপা এন্টারপ্রাইজ, এসএম করপোরেশন, বিডিএস করপোরেশন ও মেসার্স জয়নুর ট্রেডার্স।
আমদানির অনুমোদনপ্রাপ্ত মীম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিকে আইপি (আমদানির অনুমতি) নিয়ে জটিলতা ছিল। এ কারণে আমদানি করতে পারছিলাম না। তবে আজ আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছি। ধারাবাহিকভাবে ডিম আমদানি করতে হবে। প্রথমে অল্প পরিমাণে আমদানি করব আমরা। শুল্কের কারণে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এ কারণেই এখনো দেশে ডিম আসেনি। আমাদের আমদানির উদ্দেশ্য দেশের বাজারে ডিমের দাম স্থিতিশীল রাখা। কিন্তু লোকসান দিয়ে কেউ তো ডিম আমদানি করবে না। শুল্কের কারণে আমদানি করলে আমাদের লোকসানই হবে।’
আরেক প্রতিষ্ঠান টাইগার ট্রেডিংয়ের মালিক সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমরা তিন-চারটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছি। আমরা প্রথমদিকে অল্প পরিমাণে আমদানি করব। দেখতে হবে যে খরচ কেমন পড়ছে। শুল্ক দিয়ে আমাদের খরচ পড়ে যাবে প্রায় ১০ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। সামনের সপ্তাহে আমরা আমদানি শুরু করব। দেশে আসলে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা নির্ধারিত পয়েন্টগুলোয় ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রি করব। শুরুতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে আড়তে না দেয়ার। কারণ আড়ত থেকেও দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের ডিম আমদানির একটিই উদ্দেশ্য মানুষ যেন ন্যায্যমূল্যে ডিম খেতে পারে।’
নতুন করে আরো পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয় গত ৮ অক্টোবর। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইউনিয়ন ভেঞ্চার লিমিটেড, জেএফজে প্যারাডাইস কানেকশন, লায়েক এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স লাকি এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স পিংকি ট্রেডার্স। এসব প্রতিষ্ঠানও এখন পর্যন্ত কোনো ডিম আমদানি করতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিম আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে চারটি শর্তের ভিত্তিতে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুমুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। এছাড়া আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রফতানিকারক দেশের সরকার নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ জমা দিতে হবে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে সিন্ডিকেশনের প্রমাণও পেয়েছে সরকারি সংস্থাগুলো। বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও এ উদ্দেশ্য পূরণের পথে বড় বাধা হয়ে উঠেছে ৩৩ শতাংশ শুল্ক।