বেপরোয়া সিএনজি অটোরিকশা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ৩:০০:৫৮ অপরাহ্ন
মুনশী ইকবাল:
সিলেটে ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ইচ্ছেমতো ভাড়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং যত্রতত্র পাকিং ও স্ট্যান্ড স্থাপন করে প্রতিনিয়ত আইন ভাঙছে এই তিনচাকার যান। আইন ভাঙার পাশাপাশি যাত্রী হয়রানিতে একসময়ের জনপ্রিয় এই বাহন নগরবাসীর কাছে ফোঁড়ার উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত নগরে কার্যত কোনো গণপরিবহণ অর্থাৎ বাস মিনিবাস না থাকায় সিএনজি অটোরিকশা এই সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। নগরীতে যানজটের প্রধান মাধ্যম এই অটোরিকশা। নগরীর ব্যস্ততম ধোপাদীঘির পার থেকে বন্দর হয়ে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট এবং জিন্দাবাজার কেবল এই অল্প এলাকায় ১০টি সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড দেখা গেছে। এরবাইরে আম্বরখানা, পাঠানটুলা, মদীনামার্কেট, ওসমানী মেডিকেল এলাকায় স্ট্যান্ডগুলোও স্বমহিমায়। আর কোর্ট পয়েন্টে তো বিশাল এলাকা নিয়ে রাস্তার পুরো একদিক দখল করে তাদের অবন্থান। এসব স্ট্যান্ডের একটিরও কোনো অনুমোদন নেই। ফলে সবসময় এসব এলাকায় যানজট লেগে থাকে। পুলিশ কিংবা নগর কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে এসব সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে। একদিকে অভিযান শেষ হয় অন্যদিকে আবার বসে যায়। পর্যাপ্ত গণপরিবহন চালু ছাড়া এটা সামাল দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন সচেতন যাত্রীরা। সিএনজির মতো একটি বাহন সিলেটের মতো স্মার্ট সিটি এখন গণপরিবহনের মতো ব্যবহার অযৌক্তিক বলেও মনে করেন তারা।
২০১৪ সাল থেকে সিলেটে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রয়েছে। তবে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকলেও থেমে নেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা বেচাকেনা। প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন সড়কে নামছে নতুন নতুন গাড়ি। সাথে মেয়াদ উত্তীর্ণ কিংবা ভাঙাচোরা গাড়ির পাশাপাশি আছে বৈধ সিএনজি অটোরিকশাও। এতে স্মার্ট সিটির বেশিরভাগ সড়কই সিএনজি অটোরিকশার দখলে। এতে নগরে বাড়ছে যানজট, বাড়ছে ভোগান্তি।
এসএমপির একটি সূত্র বলছে, সিলেট সিটিতে প্রায় ২২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। যা সড়কের তুলনায় অনেক বেশি। এখানে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার সিএনজি চলাচল করতে পারে। আর বেশি হলেই সিলেটে যানজট কিংবা অন্যান্য সমস্যা কমবে না। যানজট, স্ট্যান্ড জটলা এসব নিয়ে সিএনজির আলোচনা পুরনো। তবে সম্প্রতি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে নতুন করে তা হলো অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও ভাড়া। সিলেটে সিএনজিতে তিনজনের বেশি যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ করে পুলিশ। এরআগে পাঁচজন করে যাত্রী বহন করতো অটোরিকশাগুলো। এরপর তিনজনের অজুহাতে ভাড়া অর্ধেক বাড়িয়ে দেন চালকরা। কিন্তু এখন হরহামেশা তিনজনের জায়গায় পাঁচজন নিলেও ভাড়া আগের মতোই দিতে হয় যাত্রীদের। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রী ও চালকদের মধ্যে বাকবিতন্ডা চলে। যাত্রীরা বলেন এটা দেখার দায়িত্ব প্রশাসন ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর কিন্তু তারা কেউ এটা খেয়াল করছে বলে মনে হচ্ছে না।
নগরীর কোর্ট পয়েন্টের সামনে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন তিনজন নিয়ে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল আমরা কিছুদিন তা মেনেছিলাম। কিন্তু দিনদিন দ্রব্যমূল্যের দাম এত বেড়েছে যে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারছি না। তাই পাঁচজন না নিলে পোষায় না। আমরা মনে করি সিএনজির দাম পুণনির্ধারণ এখন জরুরি। প্রতিদিন এসব চিল্লাচিল্লি ভালো লাগে না। তারউপর রয়েছে বিভিন্ন জায়গায় মাসোয়ার বা চাঁদা প্রদান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কুদরত উল্লাহ মসজিদের সামনে সিএনজি স্ট্যান্ডের কাছে এক যাত্রীর সাথে কথা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী ঐ যাত্রী বলেন আগে মেডিকেল আমরা ১০ টাকায় যেতাম পরে তিনজনের নিয়ম হলে ১৫ টাকা করা হয়। কিন্তু এখন পাঁচজন নিলেও সেই ১৫ টাকা দিতে হয়। ড্রাইভারদের বললে কথা শুনে না। কেউ ভালোভাবে বলে আমাদেরও চলতে হবে সবকিছুর দাম বেশি কেউ বলে ১৫ টাকা হলে চলেন নইলে পারবো না। তিনি বলেন সারাদিন অফিস করে তাড়া থাকে কখন বাসায় যবো এই সময় এসব ভাড়া নিয়ে তর্ক বিরক্তিকর। সিলেটের মতো একটি শহরে গণপরিবহন হিসেবে বাস না থাকা দুঃখজনক। নগর বাস নামে যে কয়েকটি আছে তা অল্প কয়েক রাস্তায় চলে আর সবসময় পাওয়াও যায় না। তাই বাসের সংখ্যা বাড়নো খুব জরুরি।
নাম প্রকাশ না করে এক সিএনজি অটোরিকশা সংগঠনের এক নেতা বলেন অনেকগুলো সংগঠন হয়ে যাওয়ায় কিছুটা সমন্বয় করতে সমস্যা হচ্ছে। এরবাইরে আধিপত্য নিয়েও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনেকে শ্রমিক ঐক্যে ঝামেলা করছেন। তাই কোনো কোনো স্ট্যান্ডে চালকরা কিছুটা বেপরোয়া আমারও খেয়াল করেছি। তবে আমরা যার যার সংগঠনের আওতাভুক্ত স্ট্যান্ডগুলোতে চালকদের মনিটরিং করি অনেক সময় স্ট্যান্ড থেকে বের হয়ে তারা সামনের দিকে যাত্রী নিয়ে নেয়। তাছাড়া সবকিছুর মাত্রতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় চালকরা আমাদের ভাড়া পুণনির্ধারণের জন্য চাপ দিচ্ছেন। আশাকরছি শ্রমিক সংগঠনগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে শীঘ্রই ভাড়া পুণনির্ধারণ করা হবে।