২৮ অক্টোবর ঘিরে কঠোর বার্তা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩২:০৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দেয়ার দাবিতে বিএনপি ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে। এ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। কি ঘটতে যাচ্ছে ওইদিন তা নিয়ে আলোচনা চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সর্বত্র। তবে যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার যে ব্যাপক প্রস্তুত সেটা গতকাল আরো স্পষ্ট হয়েছে।
গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা দিয়েছেন বিএনপিকে। আন্দোলনের নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে বিএনপি-জামায়াত চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আইনজীবী মহাসমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। একইদিন ডিএমপি কমিশনারও চরম হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
এর আগে গত সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সমাবেশে বলেছেন, ঢাকা অবরোধ করতে এলে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরে জমায়েতের চেয়েও করুণ পরিণতি হবে। তিনি আরো বলেছেন, বিএনপি ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির পরিণতি ১০ ডিসেম্বরের মতোই হবে। ১০ ডিসেম্বর তাদের যেতে হয়েছিল গোলাপবাগের গরুহাটে, এখন কোথায় যাবে সেটাই দেখার বিষয়।
সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, ২৮ অক্টোবর বিএনপি বড় জমায়েত করে ঢাকা অচল করে দিতে পারে। এরপর একে একে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামপন্থী অন্যান্য দলও রাজপথে নেমে সরকারকে চাপে ফেলতে পারে। অর্থাৎ বিএনপি রাজপথে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেবে। অন্যান্য শক্তি নেমে ঢাকা পুরোপুরি অচল করে দেবে। যেকোনো মূল্যে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে চায় সরকার।
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে এই মুহূর্তে ‘সর্বোচ্চ’ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকদের অনেকে তাঁদের সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে ওই মহাসমাবেশকে বিএনপির ‘মরণ কামড়ের’ শুরু হিসেবে দেখছেন। এ জন্য বিএনপির এই সমাবেশে চাপ প্রয়োগ করে জমায়েত ছোট করাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।
ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ জানিয়েছে, বিএনপির এ মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে রাজপথে কঠোর অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের নামে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের কড়া জবাব দিতে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক মাঠে বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সবার মনে প্রশ্ন জাগছে আসলেই কী ঘটতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর?
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের মহাযাত্রা শুরু হবে-দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। অনেক বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আশা করছি সরকারের বোধদয় হবে, তারা পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করবে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে, দেশকে সংকটের হাত থেকে উদ্ধার করবে। এটা আমরাই শুধু চাই না, আন্তর্জাতিক বিশ্বও চায়-যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা সবাই চায়। যদি সরকারের বোধোদয় না হয়, তাহলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।
জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে আবর্তিত হবে মহাযাত্রার কর্মসূচি, যার মূল লক্ষ্য থাকবে তপশিল ঘোষণা ঠেকানো। সেজন্য ২৮ অক্টোবরের পর তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত টানা কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য বিএনপির। এর অংশ হিসেবে তপশিলের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই এ কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটি। এ সময় ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও আন্দোলন চলবে।আন্দোলনে পুরো দেশকে যুক্ত করবে বিএনপি। তবে রাজধানীর ওপর থাকবে আন্দোলনের মূল ফোকাস।
নভেম্বরের শুরুতে এমনকি মহাসমাবেশের পরের দিন থেকেও শুরু হতে পারে মহাযাত্রার ওই কর্মসূচি, যা ঘেরাও দিয়ে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে। বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনের এ পর্যায়ে ঘেরাও ছাড়া বিক্ষোভ, অবরোধ এমনকি হরতালের কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে শেষ পর্যায়ে দেশজুড়ে চলতে পারে লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি। এর মধ্যে থাকতে পারে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ। নেতাকর্মীরা যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।
এদিকে বিএনপি সূত্র বলছে, বিএনপি ঢাকায় তাদের মহাসমাবেশের প্রস্তুতির কাজ জোরদার করেছে এবং দলটির প্রতিটি জেলা ইউনিটও এখন কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের করণীয় কিংবা কৌশল নির্ধারণ করছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নেতৃত্বে প্রতিটি বিভাগের জন্য একটি করে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে কর্মী সমর্থকদের ঢাকায় আসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে। এক্ষেত্রে কোন ‘অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে’ পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটি মোকাবেলা করার কৌশল চূড়ান্ত করার জন্যও কাজ করবেন তারা।