সমূদ্র উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর আঘাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০০:৪০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : কিছুটা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের উপকূল আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় হামুন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করা শুরু করে । প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি ক্ষয় করে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। আবহাওয়াবিদ মনওয়ার হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘূর্ণিঝড়টি রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করে। এটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলের দিকে এগুতে থাতে। আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার।
তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুন মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় তান্ডব শুরু করে। হামুনের আঘাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা উপড়ে গেছে। ঝড়ো বাতাসের কারণে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কয়েক ঘন্টা যাবত বাইরে বেরোতে পারেন নি উপকূলের বাসিন্দারা।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ ইমাম উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘূর্ণিঝড় হামুন কক্সবাজারে আঘাত হানতে শুরু করে। সাতটার পর থেকে কক্সবাজারে প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হতে থাকে। দমকা হাওয়ার কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা, বাড়িঘর ও স্থাপনা ভেঙে যাওয়ার খবর এসেছে। এছাড়া এসময় মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, কুতুবদিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে হামুনের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে আবহাওয়া দফতর থেকে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
এর আগে সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ (১২ নম্বর) বুলেটিনে বলা হয়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানবে। তাই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ সময় প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝাড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে একই এলাকায় (২০.৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০.০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৩৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এদিকে রাত ৯টার আবহাওয়া সংবাদে বলা হয়েছে- ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র মূল অংশ ৭টা থেকে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। মঙ্গলবার রাতে আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২৫ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভুমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।