ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজারে দুজনের মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৫:১৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় হামুন। উপকূল অতিক্রমকালে আঘাতে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে উড়ে গেছে গাছপালা ও কাঁচা ও আধা কাঁচা ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় দেয়াল ও গাছ চাপা পড়ে কক্সবাজার জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ছয়জন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়।
বাতাসের তীব্রতায় কক্সবাজার শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব পাহাড়তলী গ্রামে বাড়ির দেয়াল চাপায় আবদুল খালেক (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান। দেয়াল এবং গাছপালা পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের কবরস্থান এলাকায় রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘরের সামনের গাছ চাপা পড়ে মারা যান হারাধন দে (৪৫) নামের আরেক ব্যক্তি। মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, গাছ চাপা পড়ে হারাধন দে মাথায় আঘাত পান। হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গাছ চাপা পড়ে আহত ছয়জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টা হতে ঘুর্ণিঝড় হামুন কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে। এরপর একটানা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজার উপকূল ও এর আশপাশের অঞ্চল দিয়ে ব্যাপক ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। একই সাথে চলে বজ্রসহ বৃষ্টিও।
ঝড়ো হাওয়া আর বাতাসের তীব্র আঘাতে কক্সবাজার শহর ও উপকূল এলাকায় গাছপালা উপড়ে এবং কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাঝরাতেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল।
কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরসহ অনেক এলাকায় ঝড়ের আঘাতে গাছ উপড়ে পড়ে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যহত হয়। সন্ধ্যার পর থেকে কক্সবাজার শহরে ও আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা হতে রাত ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা শহরসহ পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে সর্বত্র।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় হামুনে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে জেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার শহরের সমিতি ও কুতুবদিয়া পাড়াসহ জেলার উপকুল এলাকায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে, কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ বুধবার দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ ইমাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় হামুন আজ সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। ঘুর্ণিঝড় হামুন সাগরে গতিপথ পরিবর্তন করে এটি কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূলের দিকে ধাবিত হয়। পরে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বরের পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। ঘুর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্র বৃষ্টি হয়।
তিনি আরও জানান, রাত ১০টার পর থেকে ঘুর্ণিঝড় হামুন কক্সবাজার উপকুল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে যায়। তবে এর প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কক্সবাজার শহরের ব্যবসায়ী স্বপন গুহ জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সোমবার রাত হতেই বৃষ্টিপাত চলে। মঙ্গলবার সারাদিন বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এসময় হালকা বাতাস হলেও সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে অকস্মাৎ ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। এসময় বৃষ্টিপাতও সমানে চলে। বাতাসের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, সড়কে চলাচল করা ইজিবাইকগুলো উড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
পেশাজীবি ওয়াহিদ রুবেল বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অফিস হতে বেরিয়ে দেখি শহরের প্রধান সড়কে লণ্ডভণ্ড অবস্থা। সড়কের উভয় পাশের ব্যাংক-বিমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় সাইনবোর্ড বাতাসের তোড়ে উপড়ে সড়কে পড়ে যায়। বিভিন্ন স্থান হতে টিনসহ হালকা পণ্যগুলো উড়ে একস্থান হতে অন্যস্থানে সরে যায়। সমানে ভেঙে পড়েছে গাছের ডালপালা। শহরের অনেক উপসড়কেও গাছ ভেঙে পড়ে জন চলাচল বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। ঝড়ো বৃষ্টি শুরুর পর থেকেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৈকতে বিপদ সংকেতের অংশ হিসেবে পর্যটকদের সতর্কতা হিসেবে মাইকিং করা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় কক্সবাজারে ব্যপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। কক্সবাজারের উপকুলীয় এলাকার ৩০ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। উপকূলের নৌযান এবং মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সাগরে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগে থেকেই অনেক নৌ-যান উপকূলে নোঙর করা রয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা কমিটির সভা করা হয়। উপকুল এলাকায় লোকজনদের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বিকেল হতে মাইকিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রাথমিক ভাবে জেলার নয় উপজেলায় গুরুত্ব বিবেচনায় কমবেশি করে ১৪ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতি উপজেলায় ৫০ হাজার করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাড়ে চার লাখ নগদ টাকা। বুধবার ক্ষয়ক্ষতির উপর ভিত্তি করে বরাদ্দের আবেদন করা হবে।
কক্সবাজার পৌরসভা মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডে দেয়াল চাপায় একজন মারা গেছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন।