একদিন পরেই ২৮ অক্টোবর : রাজনীতিতে রুদ্ধশ্বাস সময়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ৩:০০:১৩ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আর মাত্র একদিন পর আলোচিত ২৮ অক্টোবর। সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ওইদিন ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। জামায়াত মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে শাপলা চত্বরে। জবাবে আওয়ামী লীগও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে কর্মসূচি দিয়েছে শান্তি সমাবেশের। বড় তিন দলের এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে রুদ্ধশ^াস সময় পার করছেন সাধারণ মানুষ। কি ঘটে ওইদিন সেদিকেই দৃষ্টি মানুষের।
পছন্দের ভেন্যুতে সমাবেশের জন্য অনড় অবস্থানে বিএনপি-জামায়াত। যেকোন মূল্যে নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ হবে বলেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছেন দলগুলোর নেতারা। গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সোজা কথা, আমরা সমাবেশ করব। যেখানে (নয়াপল্টনে) করার কথা, সেখানে করব। সেটা পুলিশের অনুমতি নিয়ে করতে হবে, সংবিধানের কোথায় আছে?
অন্যদিকে, ২৮ অক্টোবর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। গতকাল তিনি বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, দেশের সংবিধান মোতাবেক আমরা সকল কর্মসূচি পালনের অধিকার রাখি।
আর বিএনপি-জামায়াতের অনড় অবস্থানের মাঝে কঠোর অবস্থানে ক্ষমতাসীন দল ও সরকার। এই ক’দিন ধরে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলটির নেতারা বিএনপিকে ছাড় না দেয়ার হুশিয়ারী দিচ্ছেন। একই সুরে অভিন্ন ভাষায় কথা বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারাও। গতকালও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ এবার আটঘাট বেঁধে নেমেছে। বিএনপি অলিগলিতে গেলেও পালাবার পথ পাবে না।
সর্বশেষ গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কন্ঠে কৌশলী উত্তর শুনা গেলেও সরকার যে কঠোর অবস্থানে তা ইংগিত দেয়।তিনি বললেন, জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে ঢাকায় কোনো সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত দল নয়। কাজেই তারা জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে যদি আসে, তাহলে তাদের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
জামায়াতে ইসলামী সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে কি না, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কমিশনারকে (ডিএমপির কমিশনার) জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন।এর আগের দিন ডিএমপির এক যুগ্ম কমিশনার বলেছিলেন, জামায়াতকে সমাবেশে অনুমতি দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
ওদিকে, বিএনপির মহাসমাবেশের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকার কোথায় বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার নেবেন। মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে, ডিএমপি কমিশনার নিশ্চয়ই তাদের অনুমতি দেবেন।এদিকে, গণমাধ্যমে খবর এসেছে ২৮ অক্টোবর এবং এর পরবর্তী সাত দিনকে ‘স্পর্শকাতর’ সময় হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মূলত ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির বিপুল প্রস্তুতি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলেরও একই দিনে সমাবেশ করার ঘোষণা থেকেই এমন বিবেচনা ক্ষমতাসীন দলের। ওই সময় রাজধানী ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনে ‘আক্রমণাত্মক’ হওয়ারও প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগে। দলের নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।এ অবস্থায় দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ২৮ অক্টোবর ঘিরে ছড়িয়ে পড়ছে উত্তেজনা। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। রাজনৈতিক মাঠে বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে জনমনে এখন অজানা আশঙ্কা। চলছে নানামুখী আলোচনা ও গুঞ্জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। পদস্থ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন। মাঠপর্যায়ে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমে বলেন, এক দল আন্দোলনের মাঠে কর্মসূচি দিয়েছে। আরেক দল যদি এটা প্রতিহত করার জন্য মাঠে নামে। তাহলে সংঘাতের শঙ্কা দেখাই দেয়। আপনি যদি আগুন দিয়ে আগুনকে প্রতিহত করতে চান, তাহলে আপনাকে ছাই-ভষ্ম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এটাই বাস্তবতা। তবে এ পর্যন্ত আমরা যেটা দেখেছি, বিরোধী দল চেষ্টা করেছে অহিংস থাকতে, সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে। আমরা আশা করবো যে, পুলিশ যদি বাড়াবাড়ি না করে, সরকারের পক্ষ থেকে যদি ভূমিকা না নেওয়া হয়, তাহলে শান্তিপূর্ণই হবে। আর শান্তিপূর্ণ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ সহিংসতা হলে সবারই ক্ষতির কারণ হবে।
এদিকে, ২৮ অক্টোবর ঘিরে যখন টালমাটাল অবস্থা তখন পর্দার আড়ালে, রাজনীতির মাঠে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনাকর মুহূর্ত পার করছে দেশ। এরইমধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যমান। কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকের পর চলছে দৌড়ঝাঁপ। দুই শিবিরই তৎপর। আন্তর্জাতিক দুনিয়া অবশ্য বিভক্ত। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বার্তা স্পষ্ট, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা হিসাবনিকাশ।