বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ৮:৪৬:১৪ অপরাহ্ন
# পুলিশের মুহুর্মূহ সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারশেল নিক্ষেপ
# পুলিশ সদস্য ও যুবদল নেতার মৃত্যু, আহত অসংখ্য
জালালাবাদ রিপোর্ট: রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে হঠাৎ করে দুপুর আড়াইটায় সমাবেশের দুইদিকে অবস্থান নেয় পুলিশ। এতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় নয়াপল্টন ও আশপাশ এলাকা। এসময় এক পুলিশ সদস্য ও যুবদল নেতার মৃত্যু ও অসংখ্য আহত হন। ফলে পন্ড হয়ে যায় বিএনপির বহুল আলোচিত মহাসমাবেশ।
এ ঘটনায় বিএনপি আজ রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ার আগমুহূর্তে তিনি ওই ঘোষণা দেন। এসব ঘটনায় রাজধানীর সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সব মিলিয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে রাজধানী ঢাকাজুড়ে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় ১০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ কাকরাইল মোড় থেকে ধীরে ধীরে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে পল্টনের দিকে এগিয়ে যায়। এক সময় বিরামহীন রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে।পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দের মধ্যে মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে চলে যেতে বাধ্য হন কেন্দ্রীয় নেতারা। কাঁদানে গ্যাসের কারণে সমাবেশস্থলে কারও পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। শনিবার বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টন এলাকায় এমন পরিস্থিতি ছিল।
এর আগে বেলা ২টার দিকে মহাসমাবেশস্থলের মঞ্চ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কারও উসকানিতে পা দেবেন না, দয়া করে বসে যান। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নস্যাৎ করতে চায় তারা (সরকার)।
মির্জা ফখরুল যখন এ আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তখন কাকরাইলের দিক থেকে কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া আসছিল। তবে মহাসমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। এ সময় মঞ্চ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দু-একটা পটকায় ভয় পাবেন না। গুলি হলে হবে।’
এরপর বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমান বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্যের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তাঁর বক্তব্যের শেষ দিকে এসে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। তখন বেলা আড়াইটা। এর আগে বক্তব্যে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ জনসভায় গোলাগুলি করছে তারা।
আমীর খসরুর বক্তব্যের সময়ও বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কাকরাইলের দিক থেকে এই শব্দ যখন আসছিল, তখনো মহাসমাবেশস্থলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসর ধোঁয়া বিএনপির মঞ্চের দিকে আসতে থাকে। তখন উত্তেজনা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়, আমিনুল হক, ইশরাক হোসেনসহ নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে কাকরাইলের দিকে যেতে থাকেন। তখন সমাবেশস্থলে কাঁদানে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে মঞ্চ ছাড়তে বাধ্য হন নেতা-কর্মীরা।
এদিকে, নয়াপল্টন ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সরকার বিরোধীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও কোথাও থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিএনপি ও সমমনা দলের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাংবাদিকরাও। দুপুরে কাকরাইলে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায়। কাকরাইল, পুরান পল্টন, আরামবাগ, দৈনিক বাংলা মোড়, শান্তিনগর, সেগুন বাগিচা, বিজয়নগর,আরামবাগ এলাকা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ।
দুপুর ১টার দিকে কাকরাইল এলাকায় মসজিদের কাছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাড়ির সামনের রাস্তায় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে তা নাইটিঙ্গেল মোড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তা বিজয়নগর এলাকায় বিস্তৃত হয়।
বেলা ৩টার দিকে পুলিশ নাইটিঙ্গেল মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় নয়াপল্টন ও শান্তিনগরের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছোড়া হয়। পুলিশের ধাওয়ায় বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা থেকেও বিএনপির লোকজন সরে যায়। ৩টার দিকে পুরান পল্টনে পুলিশ অবস্থান নেয়। সেসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে। পরে ফকিরাপুল, আরামবাগ, সেগুন বাগিচা এলাকায়ও সংঘর্ষ হয় পুলিশ এবং বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে।
এদিকে, সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে শামীম মোল্লা নামের একজন যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন।নিহত শামীম মোল্লা মুগদা থানা যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ইউনিটের সভাপতি। তার বাবার নাম ইউসুফ মোল্লা।
এদিকে, নিহত পুলিশ সদস্য দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় দায়িত্বরত অবস্থায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন বলে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন। বাচ্চু মিয়া বলেন, নিহত পুলিশ সদস্যের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মারধরে তাঁর ইউনিফর্ম ছিঁড়ে গেছে।