সিলেটে হরতালে ককটেল বিষ্ফোরণ, পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ৯:০০:০৬ অপরাহ্ন
ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস, বিএনপি-জামায়াতের ৮ জন আটক, আহত ৫ পুলিশ সদস্য, সাউন্ড গ্রেনেড-টিয়ারসেল নিক্ষেপ,
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে সিলেট নগরে ককটেল বিষ্ফোরণ, পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, যানবাহন ভাঙচুর ও রিকশায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। হরতালকারীদের ঠেকাতে পুলিশও রাবার বুলেট, টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছে। এ সময় মিছিল থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ৮ জনকে আটক করে পুলিশ।
এ দিকে সিলেট থেকে দূরপাল্লার বাস কোথাও ছেড়ে যায়নি। তবে নগরের সড়কে রিকশা চলাচল চোখে পড়লেও যান চলাচল একেবারেই সীমিত দেখা গেছে। ফলে জরুরী কাজে বাইরে বেরোনো লোকদের সমস্যায় পড়তে হয়। এছাড়া পাড়ামহল্লার ভেতরে দোকানপাট খোলা থাকলেও মূল সড়কে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিপণীবিতান বন্ধ দেখা গেছে। নগরের প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে ছিলো। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
হরতালে সকাল থেকেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল ও পিকেটিং শুরু করে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর নেতা-কর্মীদের। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরের তাঁতিপাড়া ও কাজী ইলিয়াস এলাকা থেকে জিন্দাবাজার এলাকায় এসে জড়ো হন মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তারা পিকেটিং শুরু করলে এগিয়ে আসে পুলিশ। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার সেল নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেনেড বিষ্ফোরণ ঘটায়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁঁড়তে থাকেন হরতালকারীরা। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে সরে যায়। এসময় পিকেটারদের ফেলে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।
এর কিছুক্ষণ পরই নগরের জেল রোড এলাকায় অবস্থান নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মহাজনপট্টি এলাকা থেকে ২৫-৩০ জনের একটি মিছিল জেল রোড পয়েন্টে এসে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায়। এরপর তারা পিকেটিং শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রæত ঘটনাস্থলে এসে রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় হরতালকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। পরে তারা মিছিল নিয়ে জেলরোডের দিকে চলে যান।
এছাড়া সকাল ১০টার দিকে নগরের দরগা গেইট এলাকায় সিলেট মহানগর বিএনপির একটি অংশ পিকেটিং করে। এসময় তারা মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও রিকশায় আগুন দেয়। পরে পুলিশ এলে তারা সরে যায়। একই সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের লালাবাজার এলাকায় গাছ ফেলে অবরোধ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একই সড়কের তেতলি ইউনিয়নে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন দক্ষিন সুরমা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে নগরের লন্ডনী রোডের হাজীপাড়ার মুখ থেকে ৩০-৩৫ টি মোটরসাইকেলে করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ১০-১২টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। এ সময় তাদের অনেকের হাতে লাঠি ছিলো। ১৫-২০ মিনিট ভাঙচুর চালিয়ে পিকেটাররা চলে যান। একই সময়ে নগরের বনকলাপাড়া এলাকায় একটি নোহা গাড়ি ভাঙচুর করে পিকেটাররা। এছাড়া নগরের বন্দরবাজার, মিরাবাজার, উপশহর, শাহী ঈদগাহ, শিবগঞ্জ এলাকায়ও পিকেটিং করে বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এদিকে হরতাল চলাকালে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পিকেটিং ও মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা।
ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস : হরতাল চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় পিকেটিংয়ের কারণে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক যানশূন্য হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার অজুহাতে পরিবহন শ্রমিকরা সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও চলেনি গণপরিহন। এতে জরুরী প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজন পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন তাদের গন্তব্যে। সকাল ১১টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়- সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বাসগুলো। পরিবহন শ্রমিক জানান, যাত্রী নেই। রাস্তায় বেরোলে গাড়ি ভাঙচুরে আশঙ্কা থাকায় গাড়ি বন্ধ রাখা হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মো: ইলিয়াস শরীফ বিপিএম (বার) পিপিএম বলেন, জনগণের সার্বিক নিরাপত্তায় ভোর থেকে আমাদের মোবাইল টিম, সিআরটি ও সাদা পোশাকে একাধিক টিম মাঠে ছিলো। হরতালের সমর্থনকারীদের ইট-পাটকেলে অন্তত ৫ সদস্য আহত হয়েছেন।