পৌনে ৪ বছর পর হরতালের উত্তাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৫:০৯ অপরাহ্ন
রোববার কার্যত স্থবির ছিলো দেশ
জালালাবাদ রিপোর্ট: তিন বছর আট মাস পর আবারো হরতাল কর্মসূচি ফিরলো রাজনীতিতে। আর ফিরেই উত্তাপ ছাড়ালো সর্বত্র। গণপরিবহন না চলায় রোববার অফিস ডেতে-ও কার্যত অচল হলো দেশ।
বিএনপির সাথে হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছিলো জামায়াতে ইসলামীও। একইসাথে হরতাল আহবান করে সমমনা আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল।দিনের শুরুতে সকালে নিজ বাসভবন থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করা হয়। আটকের সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানায় পুলিশ। পাশাপাশি বিএনপি’র বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের বাসায় পুলিশ অভিযান চালালেও উল্লেখিত নেতারা বাসায় ছিলেননা।
একইসাথে বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ৯০০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে গোটা দেশে। সিলেটেও অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের এ্যাকশন এবং হরতালের বিপরীতে আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশ ও মহড়ায় উত্তপ্ত ছিলো দেশ। সিলেটও এর ব্যতিক্রম ছিলোনা।বিএনপি সর্বশেষ হরতাল করেছিলো ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ওই হরতাল ডেকেছিলো বিএনপি। সেই হরতাল নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছিলো রাজনৈতিক অঙ্গনে। কারণ দলটি সেবারও দীর্ঘ সময় পর হরতাল কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলো।
তখন ৩ বছর ১০ মাস ১১ দিন পর ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছিলো দলটি। তার আগে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সর্বশেষ হরতাল দিয়েছিল বিএনপি।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ পালন করে দলটি।তখন হরতাল অবরোধ চলতে চলতে পরিস্থিতি নিজ থেকেই এক পর্যায়ে স্বাভাবিক হয়ে আসলে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নিজেরাই সেই কর্মসূচি স্থগিত করে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির অবসান ঘটান।
সেদিনের পর থেকে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের হরতাল কর্মসূচিতে বিএনপি সরাসরি সমর্থন দিলেও তারা নিজেরা প্রায় চার বছর কোন হরতালের ডাক দেয়নি।সর্বশেষ পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নিজেদের মহাসমাবেশে হামলার অভিযোগ করে গতকাল রোববার দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করলো বিএনপি। সর্বাত্মক হরতাল আহবান করলো জামায়াতও।।
আর এ হরতাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল অনেকটা উত্তাপ ছড়িয়েছে। স্থানে স্থানে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের ‘অতর্কিত’ পিকেটিং চলছে। হরতালের কারণে যানবাহন ছিল না বললেই চলে। ফলে জরুরি কাজে বাইরে বেরোনো লোকদের অন্তহীন সমস্যায় পড়তে হয়। সিলেট নগরসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুরোতে অধিকাংশ দোকানপাট, বিপণিবিতান বন্ধ ছিলো। যেসব দোকান খুলেছে, সেগুলোতে ক্রেতা সেভাবে দেখা যায়নি। প্রায় একই রকম চিত্র জেলা শহরগুলোতেও দেখা যায়। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জেলা শহরগুলোর সড়ক যোগাযোগ একরকম বিচ্ছিন্নই দেখা গেছে।
অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়েও পুলিশের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। রায়ট কারসহ পুলিশের বিভিন্ন গাড়ির উচ্চ শব্দের হর্ণ মানুষের মাঝে আতঙ্কও ছড়িয়েছিলো কিছুটা। যদিও পুলিশ বলছে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় তাদের এমন ব্যবস্থা। একই চিত্র ছিলো সিলেটেও।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় দলের কথাবার্তা ও পরস্পরের প্রতি হুমকিসুলভ বক্তৃতা থেকে আরও সহিংসতারই আভাস পাচ্ছেন তারা এবং নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
মহাসমাবেশ পণ্ড করার জন্য পুলিশ ও সরকারকে দোষারোপ করে জনগণকে ‘রুখে দাঁড়াতে এবং প্রতিরোধের’ আহবান জানিয়েছে বিএনপি। একই দাবী জামায়াতও জানিয়েছে।অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ স্পষ্ট করে বলেছে বিএনপিকে আর কোন ছাড়ই তারা দেবে না, বরং প্রতিহত করবে।